মেঘ আর রোদ্দুর

রিমা কনে দেখানোর প্রথার ঘোরতর বিরোধী, কিন্তু বাবার সিনেমাপ্রীতি আর রাতুলের বুদ্ধিতে পড়ে শেষমেশ নিজেকেই শোকেসে বসতে হচ্ছে। সুজনের প্রেম, পরিবারের চাপ আর তিতিরের বিয়ে—সব মিলিয়ে রিমার জীবন এখন যেন পুরোদস্তুর এক নাটকীয় হিন্দি সিনেমা!

- অনির্বাণ জানা

বাবা আবার ‘বাই ওয়ান, গেট ওয়ান ফ্রি'-র চক্করে পড়েছে। সাবেকি প্রথায় বিয়ের আগে কনে দেখানোর টিজারের ঘোরতর বিরোধী রিমা। আর দাদা রাতুলের জন্য শেষ পর্যন্ত তাই হতে যাচ্ছে। নিজে তো দিব্যি নিজের ক্লাসমেটের সঙ্গে লটকে গিয়েছে, এখন সাতে পাঁচে না থাকা বোনটাকেও বিপদে ফেলে দিচ্ছে। বাবাটাও হয়েছে তেমন, ছোটবেলা থেকে হিন্দি সিনেমার পোকা। ‘নদীয়া কে পার' বাবার অন্যতম প্রিয় সিনেমা। আর 'হাম আপকে হ্যায় কৌন' যা লাভ করেছে তার অর্ধেকটাই বাবার টাকা। মাধুরী কোথায় ‘উহু’ করে উঠবে, তার উত্তরে সলমন কখন 'আহা' করবে সব বাবার মুখস্থ। সেখানে এমন ফিল্ম থেকে তোলা সিচুয়েশন পেয়ে বাবা তো একেবারে পরিচালক প্রযোজকের কম্বো প্যাক হয়ে বসে আছে।

রাতুল শিবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে সদ্য। ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে একটা চাকরিও বাগিয়ে নিয়েছে। এমনিতে করিতকর্মা ছেলে। তিতির সেইসব বিরল প্রজাতির প্রাণী, যে মেয়ে হয়েও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিল! খুব যে একটা আহামরি সুন্দরী, তা কিন্তু নয়। অন্তত রিমার কাছে তো নয়ই। কিন্তু রাতুলদের কলেজে মেয়েদের ভীষণই অভাব! ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মেয়েদের জন্য কোটা রাখার দাবিতে ছেলেদের একটা আন্দোলন চলছে। তিতিরদের ব্যাচে সাকুল্যে বারোখানা মেয়ে। বারোটা মেয়ের জন্য প্রায় বারোশো অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েছিল। রাতুল এমনিতে গৃহকর্ম নিপুণ, উচ্চ বংশ, ভালো গান জানে। ফলে তিতির নিজের পিছনে লাইনে থাকা একশোটা ছেলের মধ্যে বাকি নিরানব্বই জনকে ক্যানসেল করে দিয়েছে।

এই পর্যন্ত গল্পটা ঠিকঠাক ছিল। তিতিরের একখানা আইআইটি ছাপ মারা দাদা আছে— এই তথ্যটুকুও তেমন বিষাক্ত নয়। কিন্তু সেই দাদা বিয়ে না করলে তিতির-রাতুলের বিয়ে হবে না, এ কেমনতরো যুক্তি? আর তিতির রাতুলের বিয়ের জন্য রিমাকে পাত্রপক্ষের সামনে শোকেসে বসতে হবে তারই বা কী মানে আছে? রিমা কি ভ্যানিটি ব্যাগ, না ঢাকাই শাড়ি, নাকি পুজোর জুতো যে এমন সাজিয়ে গুছিয়ে বসাতে হবে?