মজিলপুরের পুতুল কথা

বাংলার মাটির পুতুলের এক ব্যতিক্রমী ধারা মজিলপুর। একটি মাত্র পরিবার বংশ পরম্পরায় আগলে রেখেছে এই শিল্পের দৃষ্টিপ্রদীপ। সেই আশ্চর্য কাহিনির সন্ধানে অনিকেত গুহ।

- 

শিওয়ালদহ থেকে নামখানা বা লক্ষ্মীকান্তপুরগামী | ট্রেনে উঠে পড়ুন। খানিক ভিড় ঠেলে বরাতজোরে বসার জায়গাও হয়ে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, ট্রেনের ফুরফুরে হাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না। কারণ, আপনাকে নামতে হবে জয়নগর মজিলপুর স্টেশনে। স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করতে করতে আপনি পৌঁছে যাবেন মজিলপুরের বোস পাড়ায়। আর সেখানেই চোখে পড়বে মস্ত এক বাড়ির দাওয়ায় তৈরি হচ্ছে আজব কিসিমের সব পুতুল। নরম মাটির ছাঁচে রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে পুতুল তৈরির কাজ। নির্দ্বিধায় বুঝে যাবেন, এ বাড়ি আর কারও নয়, স্বয়ং শম্ভুনাথ দাসের, যিনি নিরলস ভাবে গড়ে চলেছেন ছোট, বড়, মাঝারি নানা মাপের পুতুল। আর তাতে হাত লাগিয়েছেন তাঁর পরিবারের লোকেরাও। আচ্ছা, কে এই শম্ভুনাথ দাস? প্রতিবেদনের শুরুতেই বা কেন আসছে তাঁর প্রসঙ্গ? উত্তর জানতে এ বার তা হলে সেই প্রসঙ্গেই আসা যাক । এর জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে বেশ কয়েক শতাব্দী পিছনে। সময়টা সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি । অবিভক্ত বাংলার যশোরে তখন জমিদার ও পাইকবরকন্দাজদের মধ্যে চলছে বিবাদের জেরে অশান্ত, অরাজক পরিস্থিতি। অশান্তির জেরে বহু জমিদার সে সময়ে পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান) নদিয়া, হুগলি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যেতে থাকেন। অনেকের মতো এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন জমিদার চন্দ্রকেতু দত্ত। তাঁদের সঙ্গেই এসেছিলেন জমিদারদের খাস পেয়াদা ও তাঁর পরিবার। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এক বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে তখন গঙ্গার মৃতপ্রায় প্রবাহ। পলি জমে গতিপথ পরিবর্তনের ফলে মজে যাওয়া গঙ্গার উপর শুরু হল বসতি স্থাপন। সেই থেকে এ অঞ্চলের নামও হয়ে গেল মজিলপুর। সেখানে নতুন ভাবে জমিদারির পত্তন ঘটে। পুনরায় সেখানে কাজ পান ওপার বাংলা থেকে আসা পেয়াদারা। এই পেয়াদাদেরই পদবি ছিল দাস।