রডোডেনড্রনের দেশে

দক্ষিণ সিকিমের এক ছোট্ট জনপদ, হিলে-বার্সে ঘুরে এসে লিখলেন শতরূপা কর্মকার

- শতরূপা কর্মকার

আমাকে তিনি ডাকছিলেন। ওই যে তুষারাবৃত হয়ে থাকেন যে ধ্যানস্থ যোগী, তিনি। হিমালয়। " মাত্র তিনটে দিন হাতে পেলেই ব্যাগ পিঠে চাপিয়ে দৌড় দেব বলে ভেবেই রেখেছিলাম। হিমালয় এক বার ডাক দিলে তা উপেক্ষা করার সাধ্য কি আছে! দোলপূর্ণিমায় ছুটি পেয়েই তাই ছুটে গেলাম পাহাড়ের দিকে। রুকস্যাক পিঠে চাপিয়ে যখন শিলিগুড়ি নামলাম, তখন কাকভোর। কালিম্পংয়ের রাস্তা ধরে একটা শেয়ার গাড়িতে চেপে তিস্তাকে বাঁ পাশে ফেলে সিকিম ঢুকলাম, তখন দুরের পাহাড় যেন আড়মোড়া ভাঙছে। দোলের সকালে রাঙা আলো গায়ে মেখে আমাদের অভ্যর্থনা জানাল জোরথাং শহর। ছবির মতো সুন্দর দক্ষিণ সিকিমের এক ছোট্ট জনপদ। এখান থেকে রওনা দিলাম মূল গন্তব্যের দিকে—হিলে-বার্সে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত হিমালয়ের পাদদেশকে রঙিন করে রাখে রডোডেনড্রন। স্থানীয় নেপালি ভাষায় এই ফুল ‘গুরাস' নামে পরিচিত। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, কেউ যেন মুঠো মুঠো লাল আবির ছুড়ে দিয়েছে পাহাড়ের গায়ে। এই যাত্রায় সেই ফুলের মরসুম দেখার ইচ্ছে ছিল। লাল ছাড়া আরও বিভিন্ন রং ও প্রজাতির গুরাস দেখতে পাওয়া যায় এ অঞ্চলে। আর দেখতে পাওয়া যায় বিপন্নপ্রায় প্রজাতির নানা পাখি ও রেড পান্ডা। পাখির ছবি তুলতেও ফোটোগ্রাফারদের ভিড় লেগে থাকে এখানে। জোরথাং থেকে রাম্মাম নদীকে পাশে রেখে সর্পিল পথে আমরা এগিয়ে চললাম পশ্চিম সিকিমের দিকে। হিলেবার্সে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের ভিতরে অবস্থিত দু'টি ছোট গ্রাম। একে সিকিমের ‘ভ্যালি অফ রডোডেনড্রন' বলে। শিলিগুড়ি থেকে একবারে হিলে-বার্সে পৌঁছোনো গেলেও তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। ফলে পাহাড়ি উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এক রাত মাঝের একটা ছোট গ্রাম ওখরেতে থাকতে হয়। প্রায় দুপুর বেলা ওখরে পৌঁছোনোর পর বিকেলে পায়ে হেঁটে ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেলাম নির্মীয়মাণ এক গুম্ফার সামনে। পুরনো গুম্ফার পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলছে সেখানকার ছোট ছোট পড়ুয়ারা। রাস্তার প্রতিটা বাঁকে মেঘ এসে লুকোচুরি খেলে যাচ্ছিল আমাদের সঙ্গে। গ্রামের বাড়িগুলোও ততোধিক সুন্দর। পাহাড়ের নিজস্ব এক রুচি আছে। প্রতি বাড়ির সামনের উঠোনে নাম না-জানা কত ধরনের ফুলের বাগান। কোথাও ইতিউতি গজিয়ে ওঠা বুনো ফুলের ঝোপ সে সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নীচে তাকিয়ে দেখি, দিগন্তবিস্তৃত মেঘের উপত্যকা। বিকেল গড়িয়ে তত ক্ষণে সূর্য ডুব দিয়েছে পশ্চিমের