নদীর নামের গল্প

বাংলা জুড়ে নদীর নাম নিয়ে রয়েছে নানা গল্প, নানা উপকথা। লিখেছেন সুপ্রতিম কর্মকার

- সুপ্রতিম কর্মকার

নদী তোর সঙ্গে যাব। নদী তোর জলে পা ভিজিয়ে সময় কাটাব ন অনেক ক্ষণ। তার পর কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দেব নদীর জলে। সে নৌকা ভাসতে ভাসতে চলে যাবে অন্য কোথাও; অন্য কোন দেশে। এমন সব নানা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তার একটা কারণও ছিল। পাঠ্য বইতে থাকা রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি' কবিতাটি তখন খুব মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে লাটুর মতো। আমিও তখন ছোট। স্কুলে গরমের ছুটি পড়লেই মায়ের হাত ধরে মামার বাড়ি যেতাম। আমার মামাবাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদের ভিতরে এক গ্রামে। সেই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত একটা নদী। নদীটার নাম ছিল ভৈরব। সেই নদীতে খুব স্রোত ছিল। গরমের বয়ে চলা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করা নদী বর্ষার জল পেলে উন্মাদের মতো চেহারা নিত। দু'কূল ছাপিয়ে বয়ে চলা নদীকে দেখে ভয় লাগত । সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। কাজেই বাড়ি থেকে ভোরবেলা বেরিয়ে মামার বাড়ি পৌঁছোতে সময় লেগে যেত গোটা একটা দিন। তার পর গ্রামের প্রাচীন বিয়ে হওয়া বট-পাকুড় গাছের ছায়ার নীচে থাকা মামাবাড়িতে সন্ধে নামত । আমরা শহুরে মানুষ। গ্রামে তখনও আলো পৌঁছোয়নি। দাদু একটা বড় হ্যাজাক জ্বালত। দিনের মতো আলো হত তাতে। তার পর শুরু হত বাড়ির উঠোনে বাঁশের মাচাতে বসে নানা গল্প । ভৈরব নদীর নাম ভৈরব হল কেন? এই উপকথা বা গল্পটা শুনেছিলাম মামা বাড়িতে গিয়েই। এক বার মহাদেবের বৌ সতীর খুব রাগ হল। সতী বলল, “দেখো মহাদেব, তুমি নেশা করে সারা দিন রায় পড়ে থাকবে, আর সংসারে চাল ডাল তেল নুন যে আনতে হয়, সে বেলায় তোমার কোনও খেয়াল থাকে না। পেটে তো খিদে লাগে। খেতে না পেলে শরীর চলবে কী করে! সারা দিন কৈলাসে পড়ে না থেকে স্বর্গে গিয়ে মুনিষ খাটতে পারো তো? তা হলে ক'টা পয়সা হয়।” এই কথা শুনে মহাদেব খুব রেগে যায় । মহাদেব নিজের জটা ছিঁড়ে ফেলে মাটির উপর। আর সেখান থেকে জন্ম নেয় একদম মহাদেবের মতো দেখতে এক উপদেবতা। উপদেবতা তো আর দেবতা নয়, কিছুটা দেবতার মতো ক্ষমতা রাখে কেবল মাত্র। কাজেই উপদেবতা ভৈরব তাড়া করল ত্রিশূল হাতে দেবী সতীকে। প্রথমে ভৈরব তাড়া করাতে দেবী সতী কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়। তার পর সতী ব্যাপারটা বোঝার পরে শিল-নোড়া নিয়ে ভৈরবকে তাড়া করে। সতীর ভয়ঙ্কর রূপ দেখে ভয় পেয়ে ভৈরব নদী হয়ে বইতে থাকে। সেই থেকে এই নদীর নাম হয় ভৈরব।