সেই সব সূর্য

ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য যাঁরা প্রায় একক ভাবে সচেষ্ট হয়েছিলেন, তাঁদের কয়েক জনকে নিয়ে লিখেছেন নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়

- নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়

সময়টা ছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ। সদ্য, কলকাতা থেকে রাজধানী দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ। বাংলাকে কী ভাবে আরও দুর্বল করে দেওয়া যায়, তার ছক করছেন লাটসাহেবরা। এই অবস্থায় কাটল আরও এক বছর।

এ দিকে দিল্লিতে পঞ্চম জর্জের সম্মানে নতুন রাজধানীতে ঘোষিত হল উৎসব। সে উৎসবে হাতির উপর চড়ে বসলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। হাতির শুঁড়ে নকশা, মাথায় অলঙ্কার। হাতির আর-এক ভাল নাম দ্বিরদ। এমতাবস্থায় সেই সুসজ্জিত হাতি চাঁদনি চক এলাকায় এলে তার উপরে হঠাৎ আছড়ে পড়ল বোমা! ভিড়ের মধ্য সেই বোমা কেউ হার্ডিঞ্জের দিকে ছুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে বারে বেঁচে গেলেন হার্ডিঞ্জ। আর মাহুত মুহূর্তে ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। সেই দ্বিরদ তার পর দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে লর্ডকে ফেলে দৌড়তে লাগল। হার্ডিঞ্জ হত্যার এই পরিকল্পনা যাঁর মস্তিষ্কপ্রসুত, সেই বাঙালি বিপ্লবীর নাম রাসবিহারী বসু। অদ্ভুত তাঁর সাহস। যেন একা এক জন মানুষ দেশকে ভালবেসে প্রায় অন্তরালে সারাটি জীবন অসাধারণ সব পরিকল্পনা করে চলেছেন। সুভাষচন্দ্রের হাতে তুলে দিচ্ছেন আজাদ হিন্দ ফৌজের ভিত্তি কাঠামো। দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, অপরাপর মনীষী, বিপ্লবীদের তুলনায় রাসবিহারী বসু আজ আমাদের কাছে অনেকটাই কম আলোচিত। কতিপয় জীবনীমূলক বই এবং অবশ্যই স্বামী বিবেকানন্দের অনুজ ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের 'অপ্রকাশিত রাজনীতিক ইতিহাস' গ্রন্থের তৃতীয় পরিশিষ্ট অংশে নলিনীমোহন মুখোপাধ্যায় এই অসমসাহসী মানুষটিকে নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান চলে যান রাসবিহারী বসু। সাহিত্যের প্রতিও ছিল তাঁর অপরিসীম আগ্রহ। জাপানের পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা, অথবা রচিত বইগুলো আজও আমাদের কাছে বিস্ময়। বিস্ময় তাঁর আদর্শ, যে আদর্শ পরবাসেও ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্য থেকে তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি।