অদ্ভুতুড়ে দূরের গ্রহ

সৌরজগতের বাইরের গ্রহই ‘এক্সোপ্ল্যানেট’। তারা কেউ কয়লার চেয়েও কালো। কাউকে আবার জলে ফেলে দিলে ঠিক ভেসে উঠবেই। লিখেছেন অচ্যুত দাস

- অচ্যুত দাস

বললে বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, কিন্তু দীর্ঘ দিন মানুষের বিশ্বাস ছিল, আমরা যে গ্রহে আছি, সেই পৃথিবীই এই ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র। তার পুব আকাশে সূর্যোদয় হয় আর পশ্চিমে সূর্যাস্ত, তার মানে নিশ্চয়ই সূর্যই পৃথিবীর চার দিকে ঘোরে। তখনও মানুষ জাহাজে চেপে এই গ্রহের সমস্তটা ঘুরে দেখেনি। তাই তারা এও ভাবত যে, পৃথিবী একটা সমতল জায়গা, মোটেই গোলাকার নয়। রাতের আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা দেখা যাচ্ছে মানে সূর্যের মতো তারা হয়তো ব্রহ্মাণ্ডে অনেক আছে, কিন্তু তাদের আবার গ্রহও আছে? তা আবার হয় নাকি! ফলে ইতালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জর্দানো ব্রুনো যখন ষোড়শ শতকে সকলকে ডেকে বললেন যে, পৃথিবী আসলে সমতল নয়, বরং গোলাকার— সে আমলের রাজা এবং প্রবল প্রতাপশালী ধর্মগুরুরা সে কথা মোটেই মানতে চাইলেন না ৷

ব্রুনোর মর্মান্তিক পরিণতি ব্রুনো আরও বললেন, আকাশের তারাদের অনেকেরই হয়তো নিজস্ব গ্রহ আছে। এত এত তারার এত এত গ্রহের কোথাও হয়তো প্রাণও আছে। আর এই ব্রহ্মাণ্ডের কোনও সীমানা নেই। এই পর্যন্ত শুনে তখনকার ক্ষমতাশালীরা রাগে ফেটে পড়লেন— এ লোকটা বলে কী! তাঁরা এত দিন মেনেছেন এবং জনতাকেও বুঝিয়েছেন, পৃথিবীই এই ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর। এবং এ হেন আশ্চর্য তিনি আর কোথাওই ঘটাননি। সৌরজগতের বাইরে অন্য কোনও গ্রহ নেই আর পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও প্রাণও নেই। ব্রুনো এর উল্টো সুর গেয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন, এই অপরাধে তাঁর বিচার হল। অকুতোভয় ব্রুনো সেই বিচারে দোষী প্রমাণিত হলেন সহজেই। নিজের বিশ্বাসে তিনি অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হল— জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার। সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ব্রুনোর শরীর পুড়ে ছাই হল ঠিকই, কিন্তু তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনা ও যুক্তিসম্মত পর্যবেক্ষণের মৃত্যু হল না। যত দিন গেল, বোঝা গেল, তিনিই ঠিক। তাঁর আগে পর্যন্ত এই গ্রহ নিয়ে মানুষের লালিত বিশ্বাসের অনেকটাই ভুল।