তেত্রিশ বছর পর

জীবনবাবুর ভুলো মনই তাঁর সবচেয়ে বড় বিপদ—বাজারে ইলিশের বদলে পুঁটি মাছ কেনা থেকে শুরু করে শিল্পপতির সামনেই তাঁকে অপমান করা পর্যন্ত! ভুলে ভরা এই মানুষটিই আবার বিখ্যাত সাহিত্যিক—আর আজ ঘটেছে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল!

- সুব্ৰত নাগ

হোঁচটটা প্রথমে খান বাঁডুজ্জে গিন্নি। না, ঘরের চৌকাঠে কিংবা উঠোনে ঘাড় উঁচিয়ে জেগে থাকা কোনও ইট-পাথরের টুকরোতে নয়, হোঁচটটা খেলেন খোদ বাঁডুজ্জে কর্তার অপ্রত্যাশিত পুরুষালি আচরণে। অপ্রত্যাশিত এই কারণে বাঁডুজ্জে বাড়িতে পুরুষালি শব্দটা নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব পরিবারে চিকেন, মাটনের মতোই অলীক, নিষিদ্ধ। বিগত তেত্রিশ বছরের বিবাহিত জীবনে প্রিয়তোষ বাঁডুজ্জে তেত্রিশটা বসন্ত পার করেছেন বটে কিন্তু কখনও তেত্রিশ ডেসিবেলের বেশি গলা তোলেননি; মানে তোলার অনুমতি পাননি। যৌবনে ভালো আবৃত্তিকার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

কলেজ লাইফে নজরুলের 'বিদ্রোহী' কবিতা আবৃত্তি করে বেশ কয়েকটা প্রাইজও পেয়েছিলেন। চোখ বুজলে এখনও ভেসে ওঠে নিজেরই গমগমে উদাত্ত কণ্ঠ, ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির।' কথায় বলে ‘সে রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই।” বাঁডুজ্জে মশাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করেন, ‘সে বীরও নেই, সে বিদ্রোহও নেই। কাজেই বলাই বাহুল্য শির উন্নত থাকবে কোন ভরসায় ? বাঁডুজ্জে মশাইয়ের বহুদিনের ইচ্ছে কোনও নজরুল বিশারদকে ডেকে একান্তে জিজ্ঞেস করবেন, ‘বিদ্রোহী' কবিতাটা কি উনি বিয়ের আগে লিখেছিলেন নাকি পরে? শুধু নজরুল কেন? বাঁডুজ্জে মশাইয়ের গভীর বিশ্বাস রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত পংক্তি, ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?' সেটাও অবিবাহিত অবস্থায় লেখা। নইলে বিবাহিত বাঙালি কবি, লেখকদের এমন বুকের পাটা কিংবা কলমে এত ধক নেই যে এসব বিতর্কিত; উস্কানিমূলক আনপার্লামেন্টারি কথাবার্তা লিখবে। হোম মিনিস্ট্রি কবে কাঁচি চালিয়ে সেন্সর করে দেবে।

তারপর অনিবার্যভাবে জারি হবে পারিবারিক জরুরি অবস্থা। জাতীয় জরুরি অবস্থার মতোই বাক স্বাধীনতা ঘ্যাচাং, ঘুণাক্ষরেও বলা যাবে না মুসুরির ডালে মুসুর অদৃশ্য, মাছের ঝোল আলুনি অথবা আলুর দমের আলুগুলো বিন্দুমাত্র সেদ্ধ হয়নি; আঠালো ঝোলের মধ্য থেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এক্সট্রিম ইমার্জেন্সিতে মৌলিক অধিকারগুলো যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধোয়ার পর স্ত্রীর হাতে এককাপ গরম চা লাভ; অথবা রাতে ঘুমোনোর সময় কোলবালিশের উপর অধিকার কায়েম ইত্যাদি