ভবানীবাবুর ভূত

হারু একটু ভীরু প্রকৃতির ছেলে। রীতিমতো ভয় পেয়ে সে বলল, “তা হলে কী হবে দাদা?” হরিদাস বলল, “হবে আর কী, কোনও দিন সকালে তোর দোকানে চা খেতে এসে দেখব, তুই ঘাড় লটকে মরে পড়ে আছিস।”

- মনি শংকর চক্রবর্তী

বিজ্ঞানমাস্টারের ভূতের ভয়? শুনলে | গাধাও হাসবে! তাই ভবানীবাবুর ভূতভগবানে বিশ্বাস নেই। ‘ভূত আছে, নাকি নেই'—এই নিয়ে বাংলার দিদিমণি সুতপাম্যামের সঙ্গে প্রায়ই তর্ক লাগে টিচার্স রুমে। সুতপাম্যামের বক্তব্য, “ভূত আছে। মানুষ মরেই ভূত হয়, আবার ভূত মরে মানুষ হয়। আমার বাবা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। আমার বিয়ের কিছু দিন পরেই বাবা এক দিন ভূত হয়ে দেখা দিয়ে বলল, ‘আসছি তোর কাছেই।' এখন আমার ছেলেকে দেখুন। অবিকল আমার বাবার মতো। কথাবার্তা, চালচলন, হাসি, এমনকি বাবার মতো 'র'-এর উচ্চারণ ‘ল’ করে।”

ভবানীবাবু ফিচকিলে হাসি হেসে চশমার ফাঁক দিকে তাকিয়ে বললেন, “অ, তাই নাকি! পৃথিবীতে প্রতি দিন যদি হরেগড়ে দু'লক্ষ মরে আর চার লক্ষ জন্মায়, তা হলে তো এত দিনে ভূত থাকারই কথা নয়। দু'লক্ষ ভূত হচ্ছে আর চার লক্ষ ভূতজন্ম শেষ করে মানুষজন্ম নিচ্ছে। ভূতের অভাবে মানুষজন্ম লাটে ওঠার কথা। ” সুতপাম্যাম বললেন, “আচ্ছা বলুন তো, আজকাল আট-দশ বছরের বাচ্চাগুলো কত সুন্দর গান গাইছে। একটা মান্না বা লতা হতে কত সাধনা লাগে, তিরিশ-চল্লিশ বছরের কঠোর গানের অনুশীলন লাগে। সেখানে তারা ওঁদের গাওয়া গানগুলো কী অবলীলায় সঠিক সুর-তাল খেলিয়ে গেয়ে দিচ্ছে। না-তাকিয়ে শুনলে মনে হয় যেন, লতা, মান্না গাইছেন। পূর্বজন্মের তপস্যা ছাড়া এটা সম্ভব? ওই বিখ্যাত শিল্পীরা মরেই আবার জন্ম নিয়েছেন।”

ভবানীবাবু এর কী যুক্তি দেবেন খুঁজে না পেয়ে বললেন, “আপনার কথা মানছি, ভূত আছে। চোখে দেখেছেন কী?” সুতপাম্যামও ছাড়ার পাত্র নন, “আপনার ঠাকুরদার ঠাকুরদাকে চোখে দেখেছেন? দেখেননি। তা হলে কি বলবেন, উনি ছিলেন না? সব কিছু চোখে দেখলে তবে প্রমাণ হবে, এমন তো কথা নেই। গন্ধ শোঁকা, কানে শোনা বা অনুভবেও অনেক কিছুর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। তাপ, বাতাস, বিদ্যুৎ আপনি দেখতে পান? কিন্তু অনুভব তো করতে পারেন। তেমনই ভূত আপনি দেখতে পান না ঠিকই, কিন্তু অনুভব করা যায়। তেনারা ইচ্ছে হলে দেখাও দেন।” ভবানীবাবু প্রত্যুত্তরে একটু ঠেস দিয়ে বললেন, “আচ্ছা, তো তেনাদের কি ইচ্ছে হয়েছিল আপনাকে দেখা দেওয়ার?”