অন্য স্বাধীনতা

অন্যায়, অসহায়তা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে গর্জে উঠেছেন যে সব মহীয়সীরা, স্বাধীনতা দিয়েছেন উত্তর-প্রজন্মকে, তাঁদের নিয়ে লিখেছেন সেবন্তী ঘোষ

- সেবন্তী ঘোষ

একটা পরাধীন দেশ বহু লড়াই করে তার স্বাধীনতা অর্জন করে। আমাদের বিরাট দেশটিও বহু বিপ্লবীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সেই প্রার্থিত স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও বহু অন্যায় প্রথা, বৈষম্য, ভেদাভেদ থেকে যায়, যা থেকে মুক্তি দিতে অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বরা এগিয়ে আসেন। আশপাশের সকলকে ছাড়িয়ে তাঁরা এতটা উপরে উঠে যান যে, বহু মানুষ তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়। দীর্ঘ কালের পুরুষ প্রাধান্যের সমাজে তাঁরাই পথিকৃৎ হয়ে থাকেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নারীদের অবদান কোনও অংশে কম নয়। আমরা জানি, মানব সভ্যতার প্রথম দিকে মেয়েদের পরিচালিত সমাজ ছিল। সে যুগে পুরুষরা যেত শিকারে। সন্তানের দেখভাল করা মেয়েরা পাশের বন থেকে পেড়ে বা কুড়িয়ে আনা ফলগুলো বাড়ির আশপাশে ফেলে দেওয়ার পর দেখতে পেলেন, সেই বীজ থেকে চারা বের হচ্ছে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল বীজ বপন ও কৃষির প্রাথমিক কাজ। এই মেয়েরাই সুতো কাটা থেকে সুতোয় রং করা আর ঘর ছাওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। পরে সভ্যতার অগ্রগতির পরে তাঁরা নানা কারণে খানিকটা পুরুষদের পিছনে চলে গেলেন। বিভিন্ন আবিষ্কার, অন্যায়ের প্রতিবাদ-বিদ্রোহের নেত্রীর পদ থেকে তাঁরা সরে গেলেন বা তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হল। মাঝখানে দীর্ঘ সময় মানব সভ্যতার ধারা সচল রেখে গেছেন তাঁরা। বিচ্ছিন্ন ভাবে ক্ষমতা লাভ করে রানি, যোদ্ধা, চিকিৎসক, পণ্ডিত, কবি, প্রতিবাদী রূপে নিজস্বতার স্বাক্ষর রেখেছেন, কিন্তু অধিক সংখ্যায় এ সব ভূমিকায় থাকতে পারেননি বলে তাঁরা ঘরের কাজেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছেন। আঠারো শতক থেকেই পৃথিবীর ইতিহাসে মেয়েদের নবজাগরণ লক্ষ করা যায়। যাঁরা বেশি অত্যাচারিত হলেন, স্বাভাবিক ভাবে প্রতিবাদী হিসেবে তাঁরাই উঠে এলেন বেশি সংখ্যায়। আমেরিকায় ক্রীতদাস হিসেবে যাওয়া আফ্রিকান-আমেরিকান মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে ফেললেন। ম্যাডাম সি জে ওয়াকার নামে এক ভদ্রমহিলা নানা ধরনের চুল বাঁধা, কাটা, চুলে মাখার প্রসাধনীর ব্যবসা করে ফ্যাশন-সজ্জার শিখরে পৌঁছে গেছিলেন। এই আফ্রিকান-আমেরিকান মেয়েরা গানের জগৎ, অলিম্পিক্সের দৌড়ের মাঠ থেকে টেনিস কোর্ট, সাঁতারসবেতেই আগুনের ফুলকি ছিটিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবী জুড়েই অজস্র মেয়েরা নানা বৈষম্য দূর করার জন্য সমাজ সংস্কার অগ্রাহ্য করে, নির্ভীক ভাবে প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, স্বাধীন চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে প্রকৃতি নারী-পুরুষে