সর্বেন্দ্র, মদ ও আমি

উত্তমকুমারের পরে তাঁর জীবনে আর এক পুরুষের নাম সর্বেন্দ্র সিংহ। কিন্তু সর্বেন্দ্রও ছিলেন বিবাহিত। তার উপর সর্বেন্দ্রর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল মদ। আনন্দলোক-এর জন্য লেখা আত্মজীবনীতে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ফিরলেন তাঁর প্রেমজীবনে। এবার পঞ্চম পর্ব

- 

উ -তমদা আর সৌমিত্রদার বন্ধুত্ব দিয়ে শেষ করেছিলাম গত সংখ্যার লেখা। দু'জনেই দিকপাল ছিলেন এবং দু'জনের থেকেই অভিনয় সংক্রান্ত আমি অনেককিছু শিখেছি। রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকলেও, এই দু'জনের মধ্যে আর কোনও বিষয় নিয়ে রেষারেষি ছিল না। অনেকেই বলে থাকেন তাঁদের মধ্যে প্রফেশনাল রাইভালরি ছিল, কিন্তু আমার সেটা কখনও মনে হয়নি। আমি তো দু'জনেরই ক্লোজ় ছিলাম। বরং এরকমও শুনেছি যে সৌমিত্রদা যেহেতু সত্যজিৎ রায়ের বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন, উনি নিজেই সত্যজিৎ রায়কে বলতেন উত্তমদাকে নিয়ে কাজ করতে। তবে যাঁরা সত্যজিৎ বাবুকে চেনেন তাঁরা জানেন, উনি নিজের মন ছাড়া আর কারও কথা শুনতেন না। ওঁর যেটা মনে হবে সেটাই ঠিক। তাই তো আমার সঙ্গে একাধিক আলাপের পরেও আমাকে নিয়ে উনি কখনও কাজ করেননি। হয়তো ওঁর মনে হয়েছিল আমি ওঁর ছবিতে ফিট করব না। যদিও উনি আর ওঁর স্ত্রী আমার খুব প্রশংসা করতেন। যখনই দেখা হত তখনই বলতেন আমার মতো নাকি অভিনেত্রী হয় না। অথচ আমাকে কাজে নিতেন না! আর এক দিকপাল পরিচালক মৃণাল সেন। ওঁর সঙ্গে আমি দুটো ছবি করেছিলাম কিন্তু তারপর থেকে উনি আর আমাকে কাস্ট করেননি। আর একজন ছিলেন ঋত্বিক ঘটক। অতিরিক্ত মদ্যপান করে নিজের জীবনটা শেষ করে দিলেন। আমার সঙ্গে একটা ছবিতে কাজের কথা হয়েছিল কিন্তু তার আগে উনি মারা গেলেন। মদ্যপান করে নিজের জীবনটা শেষ করেছিলেন আর একজনও, আমার মনের মানুষ সর্বেন্দ্র সিংহ।