আধুনিক রূপকথা

“শোলে’ কি একখণ্ড ভারত মাত্র? ‘শোলে' কি শুধুই ভারত ছাপিয়ে এক মহাকাব্য? নাকি এর সংলাপ, চরিত্র, ক্যামেরার কাজ, পরিচালনা সব মিলেই শোলে ভারতীয় ছবির ইতিহাসে অমর? লিখছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।

- সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।

'শো -লে' ছবির ৫০ বছর পূর্ণ হল। একইসঙ্গে বলার কথা, 'পথের পাঁচালী'-রও ৭০ বছর পূর্ণ হয়েছে। খেয়াল করার বিষয় এই যে, এই দু'টি ছবি ভারতীয় জনমানসে সিনেমার শিল্পসম্ভাবনা ও গুরুত্ব বিষয়ে বিপরীতমুখী মন্তব্য করে। সত্যজিৎ রায় যখন প্রায় অপরিচিত একটি চিত্রভাষাকে আধুনিকতার আখ্যান ভাবেন, তখন সাতের দশকের শোলে প্রকৃতই একটি রূপকাশ্রিত উপাখ্যান। শোলে-কে আমি কী বলব? শোলের এই বিপুল খ্যাতি ও সমাদর শুধুই দর্শক সংখ্যার জন্য নয়, বস্তুত একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, পরিচালক রমেশ সিপ্পি ভারতীয় ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে এত সুনিপুণভাবে এই ছবির খাঁজে খাঁজে বুনে দিয়েছেন যে আমাদের মনে হয় 'রামচরিতমানস' পড়ছি। জয়, বীরু, গব্বর, ঠাকুর, বাসন্তী ও রাধা এরা যেন সকলেই রামায়ণ থেকে উঠে এসেছে যতটা সত্যি রাম ও সীতা, ততটাই এই বন্ধুর উপত্যকার গল্পটি। বস্তুত, পরিচালক শেখর কাপুর একদা দাবি করেন যে শোলের চাইতে স্বতঃপ্রমাণিত চলচ্চিত্র আর হয় না। ভারতীয় সিনেমা বলতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস দু'ভাগে বিভক্ত। শোলে পূর্ববর্তী ও শোলে পরবর্তী। যদি আমরা এতটা উচ্ছ্বাস নাও দেখাই, তাহলেও বলতে হবে যে শোলে একটি মাইলস্টোনের মতো বা তার চেয়েও বেশি বড় একটি স্থাপত্য। যে ছবি বিস্কুটের বিজ্ঞাপন থেকে গাড়ির বিজ্ঞাপন সর্বত্র ব্যবহৃত হয়েছে। যে ছবির ভিলেন গব্বর সিং একমাত্র রামায়ণের প্রতিতুলনা। সেই ছবি সম্পর্কে কথা বলতে গেলে মনে হয় যে এটিই ভারতের জনপ্রিয় সিনেমার পাঠ্যপুস্তক। শোলে যেভাবে সামাজিক হিংসা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্যে কথোপকথন করতে পেরেছে, তার যে সংলাপ পথ, তা সবই এখন কিংবদন্তির মতো। কোন বাচ্চা ছেলেও না জানে, ‘যো ডর গয়া, সমঝো মর গয়া!' অথবা 'কিতনে আদমি থে?' অথবা 'হম আংরেজো কে জমানো কি জেলার হ্যায়।' এমনকী যে প্রাণীটি মনুষ্যেতর, তাকেও যে বাসন্তীর নির্দেশ: ‘চল ধন্নো, আজ তেরি বসন্তি কি ইজ্জত কা সওয়াল হ্যায়', তাও সারা ভারতকে রঙিন করে রেখেছে। মোট কথা, শোলে ঘরে ঘরে নিত্যপাঠ্য পাঁচালির মতো। তাকে ‘সিনেমা' বলে বিশেষ লাভ নেই। অথবা পণ্ডিতরা বলতেও পারেন, এই ছায়াছবি জনপ্রিয়তার মোড়কে এক ধরনের জাতীয় অ্যালিগরি। হয়তো কেউ বলতে পারেন, রাজ কাপুরের ‘আওয়ারা’ও তো অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়। সেই ছবিটিকেও তো ইউরি গ্যাগারিনের সঙ্গে মহাকাশে পাঠিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। অথবা পরবর্তীকালে 'হাম আপকে হ্যায় কৌন' ও তো জনপ্রিয়। তবে দেখা য