লক্ষ্মীর ঝাঁপি থাকুক শ্রীময়ীদের হাতেই

শিক্ষা এবং কাজের জগতে নারী আগল ভেঙে বেরিয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কি করায়ত্ত হয়েছে তার? প্রশ্ন তুললেন লেখক, অধ্যাপক ও সাংস্কৃতিক কর্মী পৃথা কুণ্ডু।

- 

ক্রিসমাসের আগের দিন মনের আনন্দে কেনাকাটা ক্র করে ফিরেছেন ভদ্রমহিলা। খরচ একটু বেশিই হয়েছিল, তাতে আর কী? স্বামী আর সংসারের জন্য অনেকদিন ধরে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এখন একটু সুখের মুখ দেখা গিয়েছে, স্বামীর ‘প্রমোশন' হতে চলেছে। ক'বছর আগেও অসুস্থ স্বামীর যখন চাকরি ছিল না, তাঁকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো, সেই খরচ সামলানোর জন্য গোপনে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া, সংসার সামলে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে সেই ঋণের অনেকটাই শোধ করা— সবই তো একা হাতে করতে হয়েছে তাঁকেই। কিন্তু একটু বেশি খরচ করার অপরাধে স্বামীর কাছে ‘বকুনি' খেতে হয় তাঁকে। এমনকি গোপন ঋণের কথাটা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় লজ্জা আর অপমানের সীমা থাকে না। তিনি বুঝতে পারেন, এ তাঁর সংসার নয়, এ শুধুই খেলাঘর। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দূরের কথা, গৃহিণী হিসেবে, মানুষ হিসেবে স্বীকৃতিটুকুও নেই। সংসারের জন্য যে শ্রম তিনি দিয়েছেন, সেই শ্রমের কোনও অর্থনৈতিক মূল্য নেই— এ তো মেয়েদেরই দায়! শেষ পর্যন্ত নিজের সম্মান আর স্বাধীনতার খোঁজে ঘর ছাড়তে হয় সেই মহিলাকে। আর একজনের কথা বলি। ‘বালবিধবা’র পরিচয় পিছনে ফেলে এসে, নিজের চেষ্টায় শিক্ষিত হয়ে, ডাক্তারি পড়ে প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন ভদ্রমহিলা। খানিক সাহায্য পেয়েছিলেন কলকাতার ব্রাহ্মসমাজের কাছ থেকে। এক ব্রাহ্মসমাজ কর্মীর সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয়বার বিবাহও হয়। কী মনে হচ্ছে, এ এক স্বপ্নের উত্তরণ-কাহিনি? বাস্তব অন্য রকম। কলকাতার অদূরে এক মহিলা হাসপাতালে চাকরি পেয়ে চলে এলেন তিনি, নতুন সংসার পাতলেন সেখানেই। বিয়ের কিছু দিন পরই ‘উদারমনস্ক’ স্বামীর রূপ বদলে গেল। ভদ্রলোকের নিজের কোনও উপার্জনই ছিল না। স্ত্রীর চাকরি সূত্রে পাওয়া কোয়ার্টারে 'বাবু' হয়ে বসলেন আর শুরু করলেন ‘পৌরুষ' দেখানো। স্ত্রীর রোজগারের টাকা কেড়ে নেওয়া তো তাঁর 'অধিকার'-এর মধ্যেই পড়ে, তার পাশাপাশি স্ত্রীর কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যা সৃষ্টি করা, স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা—কিছুই বাদ যায়নি। দ্বিতীয়বার বিধবা হওয়ার পর একটু স্বস্তি এসেছিল ভদ্রমহিলার জীবনে।