কাজু

উত্তরের এক শান্ত শহরে সুন্দর বাড়িতে এসে প্রতিদিন ডেকে চায়ের সঙ্গে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে গিয়ে আবির্ভূত হলো এক ছাই-রঙা কায়োটি — আমি নাম দিলাম কাজু। কাজু ধীরে ধীরে আমার বন্ধু হয় এবং এক রাতে সে আমার জীবনের মুকুটরক্ষক হয়ে ওঠে; পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে 'ব্রেভ বয়' সম্মান দেওয়া হয়।

- বি দি শা বা গ চী

কয়েক সপ্তাহ হল আমেরিকার উত্তরে এক ) শহরে বদলি হয়ে এসে খুব সুন্দর একটা বাড়িতে উঠেছি। ড্রয়িং রুমের একটা দিকে পুরো কাচ, ছাদ থেকে মেঝে। ডাইনিং থেকে বাইরে ডেকে যাওয়ার দরজাটাও কাচের। ডেক শেষ হলেই খাদ নেমে গেছে। নীচে নদী। খাদের দেওয়াল বেয়ে অসংখ্য গাছ আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় নদীর অন্য পারে ভুট্টার খেত। তার পর ধু ধু করছে দিগন্ত। গত কয়েক দিন ধরে অসাধারণ সূর্যাস্ত দেখছি ওই দিগন্তে।

প্রতি দিন অফিস থেকে ফিরে এক কাপ চা নিয়ে ডেকে বসি। সকালে খবরের কাগজ পড়ার সময় হয় না, তাই বিকেলেই পড়ি। কলকাতার হই-হট্টগোলের পর এই শান্ত, নিরিবিলি জায়গাটা আমার বেশ ভাল লাগছিল।

এমনই এক দিন বিকেলে বাইরে বসে কাগজ পড়ছি। হঠাৎ একটা খসখস শব্দ কানে এল। ভাবলাম, কোনও খরগোশ বা কাঠবিড়ালি হয়ত। বেশ খানিক ক্ষণ চুপচাপ। তার পর আবার সেই শব্দ। এ রকম বেশ কয়েক বার হওয়ার পর একটু বিরক্তই লাগছিল। মনে হচ্ছিল, ‘আচ্ছা মুশকিল তো, একটু শান্তিতে বসে দেশবিদেশের খবর পড়ছি কোথায়.... তা না....!'

বেশ কিছু ক্ষণ এ রকম চলার পর আবার কাগজ পড়ায় মন দিলাম। হঠাৎই চোখের কোণ দিয়ে মনে হল কিছু একটা দেখলাম। কাগজ নামিয়ে সেই দিকেই এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকলাম । মনে হল, দুটো কানের মতো কিছু আস্তে আস্তে উঠে আসছে। প্রথমে ভাবলাম, হরিণ হবে হয়তো। পর ক্ষণেই মনে হল রংটা তো হরিণের নয়, কেমন একটা ছাই ছাই রং। নানা রকম ভাবতে ভাবতেই দেখলাম, সেই ‘ছাই রঙের কানধারী' দিব্যি ডেকের উপর উঠে এসেছে।

দেখে আমি একটু অবাক হলাম। কী ধরনের প্রাণী এটা? কুকুর না শিয়াল, না কি নেকড়ে, বুঝলাম না। তিনটের সঙ্গেই চেহারার খুব মিল। এমন নয় যে, আমি নেকড়ে বা শিয়াল প্রচুর দেখেছি। কিন্তু মনে পড়ল এই আমেরিকাতেই ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে এক নেকড়ে দেখেছিলাম, কিন্তু সে বোধ হয় উচ্চতায় আর-একটু বড় ছিল।