বাঙালি সত্তার নায়ক

জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়েও তিনি বাঙালি ছিলেন কিনা, তা নিয়ে একটা প্রাথমিক দ্বিধা তৈরি হয় । সেটা কি শুধু পদবির কারণে? বোধ হয় নয় । লিখেছেন পায়েল সেনগুপ্ত

- পায়েল সেনগুপ্ত

কেভুলতে পারে ‘পিয়াসা' ছবির সেই ঐতিহাসিক দৃশ্য! হলভর্তি লোকের সামনে প্রতিবাদ করে নায়ক বলছে, ‘ইয়ে মহেলো, ইয়ে তখতো, ইয়ে তাজো কী দুনিয়া/ইয়ে ইনসাঁ কী দুশমন সমাজো কী দুনিয়া/ইয়ে দওলত কে ভুখে রিওয়াজ়ো কী দুনিয়া/ইয়ে দুনিয়া অগর মিল ভিজায়ে তো কেয়া হ্যায়'... কোন দুনিয়া? লোভ, প্রতিশোধ আর হিংসার দুনিয়া, যেখানে আক্ষরিক অর্থেই আমরা আজ বাস করছি। ১৯৫৭ সালের ‘পিয়াসা' ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ছবি । গ্ল্যামার পৃথিবীর সামাজিক, মানসিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরার পাশাপাশি এই ছবি আরও একটি জিনিস উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। এই ছবির নায়কের মনের ক্যানভাস। সেই ক্যানভাস জুড়ে ছিল শহর কলকাতা, বাঙালি সংস্কৃতি, বাংলার মাটি ও হৃদয়ের আনাচকানাচ। এইসব টুকরো একত্র হয়ে যেন একটা দরজা খুলে দিলেন ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও প্রটাগনিস্ট, যিনি জন্মসূত্রে বাঙালি না হয়েও পছন্দ করতেন তাঁর বাঙালি কায়দায় লেখা 'গুরু দত্ত’ নামটিকে! নিজের আধা বাঙালি হয়ে ওঠাকে আজীবন উপভোগ করেছেন তিনি। দক্ষিণের কোঙ্কণি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয়েছিল বসন্তকুমার শিবশঙ্কর রাও পাড়ুকোনের। জন্মেছিলেন বৃহস্পতিবার, হিন্দু ধর্মীয় মতে গুরুবারে। ছেলেবেলায় একটি দুর্ঘটনার পরে তাঁর নাম বদলে করে দেওয়া হয় ‘গুরুদত্ত পাড়ুকোন'। ১৯২৫-এর ৯ জুলাই জন্ম। ওই দশকেরই শেষের দিকে বাবা শিবশঙ্কর রাও পাড়ুকোন বর্মা শেল কোম্পানিতে চাকরির সূত্রে চলে আসেন কলকাতা। সেখানেই গুরুর বড় হয়ে ওঠা, কলকাতার ভবানীপুরে। প্রথমে ভাড়া থাকতেন পদ্মপুকুরের এক ফ্ল্যাটে, সেখান থেকে অ্যাস্টন রোড ও তারপর ভবানীপুর। মা বাসন্তীদেবীও খুব ভাল বাংলা বলতে ও লিখতে পারতেন। যাত্রার প্রতি এক অদ্ভুত টান ছিল গুরুর। বাড়ির আশপাশেই বিভিন্ন জায়গায় পালা দেখে এসে আবার বাড়িতে অভিনয় করে দেখাতেন। বাউল-কীর্তন গায়কদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তেন। আবার সন্ধ্যারতির সময় ঠাকুরমা যখন প্রদীপ জ্বালাতেন, আঙুল দিয়ে আলো-