শ্যাম, এক বিদ্রোহীর নাম

তাঁর আপত্তি ছিল ‘সমান্তরাল ছবি' শব্দবন্ধে। অথচ সেই ধারার ছবিরই পোস্টারবয় শ্যাম বেনেগল, চেতনা এবং বিনোদন যাঁর ছবিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেছে। লিখছেন অংশুমিত্ৰা দত্ত

- অংশুমিত্ৰা দত্ত

হিন্দি ছবির সমান্তরাল তরঙ্গ নিয়ে হি কথা বললে শ্যাম বেনেগলের নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয়। কিন্তু প্যারালাল সিনেমার ধারায় দেশের রাজনীতি এবং শাসকের নীতিরও বড় ভূমিকা ছিল। যেমন সরকার নিয়ন্ত্রিত ফিল্ম ফিনান্স কর্পোরেশন দ্বারা ছবির প্রযোজনা বা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ছবির কলাকুশলী তৈরি। সেটিই আর্ট ফিল্ম এবং প্যারালাল ছবির মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। তবে মৃণাল সেন, মণি কওল, জন এব্রাহাম, কুমার সাহানি, এম এস সাথ্যুর ছবি যেমন সরকারি ফিল্ম ফিনান্স কর্পোরেশন বা এনএফডিসি দ্বারা প্রযোজিত, শ্যাম বেনেগলের ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয়নি। শ্যামের প্রথম ছবি 'অঙ্কুর' মোটেই সরকারি অর্থে নির্মিত ছিল না। 'ব্লেজ় এন্টারটেনমেন্ট' নামের যে বিজ্ঞাপন সংস্থায় শ্যাম কাজ করতেন (সাড়ে তিনবছরে ২০০টির উপর বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিলেন তিনি), সেই সংস্থার দুই কর্ণধার মোহন বিজলানি এবং ফ্রেনি ওয়ারিয়াভা স্বাধীনভাবে 'অঙ্কুর' এবং তারপর ‘নিশান্ত’, ‘ভূমিকা’, ‘আরোহণ’, ‘মান্ডি’, ‘ত্রিকাল' প্রযোজনা করেছিলেন। ফলে সাত ও আটের দশকের প্যারালাল সিনেমার মতো সরকারি আনুকূল্য তিনি পাননি। তাঁর কেরিয়ারে বরং নয়ের দশকে ‘মাম্মো', “সূরজ কা সাতওয়াঁ ঘোড়া', 'দ্য মেকিং অফ দ্য মহাত্মা', ‘হরি ভরি'-তে এনএফডিসি-র ফান্ডিং এসেছে। তা সত্ত্বেও শ্যামকেই প্যারালাল ছবির সেনাপতি বলে ধরে নেওয়া হয়। তার কারণ বিষয়বস্তু এবং মেকিং। সাতের দশকে সরকার, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ও সংস্কৃতি দফতর নীতি নিয়েছিল ‘ভাল সিনেমা’, যা দেশের অভ্যন্তর থেকে খুঁড়ে আনবে ‘আসল ভারত', তাকে ছড়িয়ে দেওয়ার। শ্যামের প্রথম ছবি 'অঙ্কুর' দুই প্রান্তিক মানুষ এবং সামন্ততান্ত্রিক পেষণের গল্প বলে। ছবির নায়ক মূক-বধির, নায়িকা দলিত নারী। 'অঙ্কুর' নামকরণ সেখানে একদিকে যেমন লক্ষ্মীর (শবানা অভিনীত) সন্তানকামনার প্রতীক, তেমনই দলিত সমাজের সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বীজ। অর্থাৎ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষদের গল্প শ্যাম তুলে আনলেন ছবিতে। সেখানে মেলোড্রামার পরিবর্তে স্থান পেল রূঢ় বাস্তব। সিনেমা কেবল বিনোদনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকল না, হয়ে উঠল বাস্তবের জলছবি।