স্বাধীনতার আর ভালবাসার জয়

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী অপশাসনের অবসান করেছেন যে-সব রণনায়করা, গড়েছেন স্মরণীয় ইতিহাস, তাঁদের নিয়ে লিখেছেন আশিস পাঠক

- আশিস পাঠক

দেশ মানে কী? শুধু দে কাঁটাতারের সীমানা ঘেরা একটা বিস্তীর্ণ জমি? আর স্বাধীনতা মানে সেই জমিটারই দখলমুক্তি? প্রশ্নগুলোর সহজ উত্তর হল, ‘না। দেশ মানে দেশের মাটি, দেশের মানুষ, তার মন।' ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে তাই 'জনগণমন'-র কথা আছে। আর সে মনের অধিনায়ক তাঁরাই হন, যাঁরা একার জোরে ছিঁড়ে দিতে পারেন সেই মনের কাঁটাতারগুলো, নিয়ে আসেন পরিবর্তন। তাঁরা ক্ষতবিক্ষত হন, তবু দমেন না। যেমন ধরো, মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের (১৮৮১-১৯৩৮) কথা। আতাতুর্ক তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের জাতির জনক। আতাতুর্ক কথাটার মানেই তাই, ‘তুর্কিদের পিতা’। ১৯২৩-এ যে নতুন স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি প্রজাতন্ত্রের জন্ম, সেই নতুন তুরস্কের গল্প জড়িয়ে আছে তাঁর সঙ্গেই। নতুন তুরস্ক কেন? কারণ পশ্চিম এশিয়ার এই মুসলমান রাষ্ট্রটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে মধ্যযুগীয় কায়দায় শাসন করত সুলতানরা। আতাতুর্ক তাকে আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্রে বদলে দেন। গ্রিসের সোলোনিকার এক অভিজাত পরিবারে জন্ম তাঁর। ছিলেন সুলতানের সামরিক কর্মচারী। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস পড়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই স্বপ্নের জোরেই সুলতানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরোধিতা শুরু করলেন। বদলি হলেন দামাস্কাসে। কিন্তু পরিবর্তনের স্বপ্নকে কি রোখা যায়? দামাস্কাসেই তৈরি করলেন বিপ্লবী দল 'ওয়াতন'। পরে যোগ দিলেন তরুণতুর্কি আন্দোলনে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের অন্যতম সামরিক নেতা হিসেবে মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দিলেন। ১৯২০ সালে প্রেসিডেন্ট হলেন তুরস্কের। সুলতানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে তুরস্ককে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র' ঘোষণা করলেন। লড়াইয়ের শেষ অবশ্য সেখানেই নয়। ১৯২৪ সালে “খলিফা' পদটাই তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করলেন তুরস্ককে। উচ্ছেদ করে দিলেন বহুবিবাহ ও পর্দাপ্রথা। মেয়েদের স্কুল-কলেজও হল। যে তুরস্ক ছিল 'দ্য সিকম্যান অফ ইউরোপ', তা-ই ঘুরে দাঁড়াল নিজের শক্তিতে, শিল্প আর বাণিজ্যের প্রসারে।