অভিনেত্রী

গল্পের সংক্ষিপ্তসার: শিউলি, একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার গান ও স্বপ্নগুলো পরিবারের কড়া শাসনে চাপা পড়ে। তার প্রতিবেশী মিনু, যে নাচ ও অভিনয়ে সফলতা পায়, তার সাথে শিউলির তুলনা চলে। শিউলির জীবন সংসার ও নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকে, কিন্তু মিনুর সাফল্য ও সাহস তার মনে প্রশ্ন ও হতাশার জন্ম দেয়। শেষে মিনুর সাহায্যে শিউলির পরিবারের বিপদ মিটে, কিন্তু শিউলির মনে নিজের জীবন নিয়ে কষ্ট ও অনুতাপ থেকে যায়।

- মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়

চেষ্টা করেছিলাম, যাতে না থামে, পারলাম না । গান থামিয়ে দিতে বাধ্য হলাম। চিৎকার হচ্ছে। কাকার গলা না? যার গলাই হোক, এরকম চিৎকারের মধ্যে গান হয়?

এমনটা ভাবার নয়, আমি বড় একজন গায়িকা আর আমার গানের সাধনায় বিঘ্ন ঘটেছে বলে আমি বিরক্ত। বরং উল্টো।

হারমোনিয়াম ছেড়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাকা ধমকাচ্ছে ওপাড়ার সুবলকে। আর সে প্রতিবাদ জানাচ্ছে মিনমিন করে। এরপর দেখি কাকা কান ধরে সুবলকে ওঠবোস করাচ্ছে। এবার আমার ভয় করতে শুরু করে। নিশ্চয়ই কোনও গণ্ডগোলের ব্যাপার। আমি কি জানলা থেকে সরে যাব? সেটাই ভালো। আর তখন কাকার কথাটা কানে আসতে সবটা পরিষ্কার

হয় আমার কাছে। ‘ফের যদি আমার ভাইঝির গান গাওয়ার সময় জানলার পাশে এসে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকিস, দেখবি আমি তোর কী হাল করি!' সুবল সাইকেল নিয়ে পড়ি কি মরি করে পালায়। লজ্জায় মাথা কাটা যায় আমার। মনে মনে ঠিক করে নিই আর কখনও সদর ঘরে বসে গান গাইব না। ছিঃ ছিঃ! কিছুটা ভয়ও লাগতে শুরু করল। কথাটা বাবার কানে গেলে ভীষণ রাগ করবে। হয়তো আমার গান শেখাটাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

স্কুল ছাড়া বাইরে বেরই না আমি। একজন বয়স্ক শিক্ষক বাড়িতে এসে পড়িয়ে যান। তাছাড়া পড়া বুঝতে অসুবিধে হলে কাকা দেখান। পরীক্ষার সময় নিয়ম করে পড়াতেও বসান। এখন ক্লাস নাইন। মোটামুটি রেজাল্ট করি। বাড়ির লোকজন সাধারণ মানের রেজাল্টের জন্য কোনও কথা বলে না, বেশি বলে আমার চলাফেরার সাবধানতা নিয়ে।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। বাবা, মা, কাকা, কাকিমা, দাদা আর আমি এই পাঁচজনকে নিয়ে সংসার হলেও ছোট থেকে দেখে আসছি এক মত এক ভাবনাতে আমাদের সংসার চলে। আর সেই বিষয়ে কারও কোনও অসন্তোষ নেই। তবে আমার দাদা অশোক, মাঝেমধ্যে একটা-দুটো উল্টো কথা বলে ফেলে। কিন্তু তারপর নিজেই চুপ করে যায়। এগতে সাহস পায় না। কাকা গম্ভীরভাবে বলে, 'অশোক, আজকাল মেলামেশা কার সঙ্গে করছ? সহবত জ্ঞানের অভাব হচ্ছে।' দাদা মাথা চুলকে আমতা-আমতা করে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে।

সেদিন ভেজা জামাকাপড় শুকোতে দেব বলে ছাদে উঠেছি। দেখি, পাশের বাড়ির ছাদে মিনু ফোনে গান চালিয়ে নাচছে। খুব বিরক্ত লাগে আমার। এ কেমন নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা! সাতসকালে ছাদে উঠে ধেই ধেই করে নাচছে। পারতপক্ষে আমি মিনুর সঙ্গে কথা বলি না। বাবাও চায় না আমি মিনুর সঙ্গে মিশি।