বাদল সরকার: অবিস্মরণীয় এক নাট্যস্রষ্টা

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা থিয়েটারে আধুনিকতম ভাবনার প্রবর্তক ছিলেন বাদল সরকার। নাট্যশালার বাইরে নাটককে কী ভাবে মানুষের এত কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, বাদল সরকারের নাট্যশৈলী তা প্রমাণ করেছে। রামকৃষ্ণ দে, কৃষ্ণনগর- ৭৪১১০১

- 

বাদল সরকার আজ এক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। নাট্য তথা সংস্কৃতি জগতে তাঁর অবদান অপরিসীম। তাঁর জন্ম শতবর্ষে দেশ পত্রিকার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) এই বিশেষ সংখ্যায় লিপিবদ্ধ হয়েছে একগুচ্ছ প্রবন্ধ এবং সম্পাদকীয় নিবন্ধ। সম্পাদকীয় নিবন্ধটি স্বল্পায়তন হলেও বাদল সরকারের নাট্য-বিশিষ্টতার এক সংক্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট রূপরেখা অঙ্কন করে। বাদল সরকার সম্পর্কে বলা হয়, সাধারণ ভাবে চিত্রমঞ্চ-খ্যাত অভিনেতা যিনি প্রচলিত প্রোসিনিয়ম ধারার মিশ্রণ ঘটিয়ে মূলত নিজের গ্ল্যামারের জোরে আর অভিনয় দক্ষতার সুবাদে নাট্যক্ষেত্রে নামী হয়েছেন, সেই রকম ব্যক্তিত্ব অপেক্ষাও একেবারে ডিগ্ল্যামারাস ডিপ্রোসিনিয়ম ধারার নাট্যস্রষ্টা রূপে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আরও বেশি কৃতিত্বের দাবিদার হয়ে উঠেছেন। যে-লক্ষ্যে অন্য ধারার নাটক মূলত প্রতিবাদ অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সমবেত হওয়া ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য জনগণকে সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটলেও অনেক ক্ষেত্রে সেই নাটকগুলো সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছোয়নি। আর এখান থেকেই জন্ম সেই বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার। এর আঙ্গিক এতটাই ভিন্ন রকমের, যার রূপায়ণ সম্ভব খোলা মাঠে, প্রকৃতির আলোয়, বিনা রূপসজ্জায়। নাটক চলাকালীন এবং সহজ ভাবে দর্শককেও নাটকের মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া যেতে পারে, তখন কেউ আর তথাকথিত দর্শক থাকেন না। সকলেই হয়ে ওঠেন সেই নাটকের কোনও না কোনও চরিত্র। কেউ কেউ মনে করেন, আমাদের নাটকের ধারায় অ্যাবসার্ড থিয়েটারে তাঁর অবদান আছে। প্রভাব আছে শরীরের বিভিন্ন ব্যবহারের, যেখানে বার্তা পৌঁছে যেতে পারে সংলাপ অপেক্ষা আরও প্রবল অভিঘাত নিয়ে।

বাদল সরকার ছিলেন অধ্যাবসায়ী। এক সময় তাঁর স্ত্রী তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী হিসাবে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি তখন রীতিমতো ইঞ্জিনিয়ার এবং বেশ খ্যাতনামা। তাঁর মনে হল, তিনিও এই বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে ছাড়বেন। গেলেন সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অ্যাডমিশন ফর্ম জমা করলেন। বাদলবাবুর ডাক পড়ল খোদ ভিসির ঘরে। কী রে বাবা! স্বয়ং ভিসি! কী ভুল করলাম। সংশয় নিয়ে বাদলবাবু উপস্থিত হলেন। ভিসি হাসতে হাসতে বললেন, বিখ্যাত হলে বুঝি বন্ধুকেও ভুলে যেতে হয়! ভিসি তখন বাদলবাবুর এককালের সহপাঠী শঙ্কর সেন। পরে যিনি তৎকালীন সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী হয়েছিলেন।