নিম্নবিত্তের অর্থনীতি, নিম্নমেধার রাজনীতি

সেই নিরিখে নোটবাতিল, জিএসটি বা সরাসরি হাতে টাকা দেওয়া গোছের ভাবনা আপাতত ততটা কার্যকরী নয় বলেই মনে হচ্ছে। আগামী দিনে অবশ্য মত বদলাতেই পারে — ভয়ে, ভক্তিতে অথবা যুক্তিতে।

- শুভ ম য় মৈ ত্র ময়

রাজনীতির পুরাকালে রাজার নীতি থেকে উন্নত গণতন্ত্রে নীতির রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়াটা মেধা, যুক্তি এবং বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দাবি। অর্থাৎ পারমাণবিক প্রযুক্তিতে উন্নতি হল আর দড়াম দড়াম করে হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে দুটো বোমা ফেলে দিলাম, এই কাজ নিম্নমেধার। এর মধ্যে বুদ্ধিশুদ্ধির কোনও গভীরতা নেই। একটা এগারো মাসের শিশু হাতে ধরে কিছু ছুড়ে ফেলতে শেখে যেমন, ঠিক সেই মাপের বুদ্ধিবৃত্তিতেই কোনও রাষ্ট্রনায়ক পাইলট সহযোগে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে বোমা ফেলিয়ে দিতে পারেন। ইতিহাস বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বইপত্র যতই এই নিয়ে পাতার পর পাতা বিশ্লেষণ করুন না কেন বোমা ফেলা কাজটার মধ্যে খুব কিছু জটিলতা নেই। পাড়ার একেবারে মোটা মাথার মস্তানও এই কাজে দক্ষ। অন্যদিকে পারমাণবিক বিজ্ঞান সংক্রান্ত যে-গবেষণা, তা অতলান্তিকের চেয়েও গভীর। কয়েকশো সেরা বিজ্ঞানী কাজ করেছেন কয়েক শতক ধরে। সেখানে অবশ্যই বুদ্ধি, মেধা বা পরিশ্রমের কথা আসবে। ঠিক সেইরকমই রাজ্যের হাতে প্রচুর টাকা আছে, সেই টাকা নিম্নবিত্তের মধ্যে বিতরণ করব, আর সেই দেখিয়ে ভোট পাব, এর মধ্যে কোনও মেধার বিষয় নেই। টাকা এল, তার মধ্যে এক হাজার কোটি আলাদা করে রাখলেন, তার পর এক কোটি করে এক হাজার মানুষকে ভাগ করে দিলেন নাকি এক হাজার করে এক কোটিকে, এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির গুণভাগ আছে। খুব হাত পা ছুড়ে দাবি করলে প্রাথমিকের আর দুটো শ্রেণি যোগ করে তৃতীয় বা চতুর্থ বলা যায়। তার বেশি কিছু নয়। এখানে রূপায়ণের প্রশ্ন থাকে, যেমন টাকা পৌঁছোবে কী করে? হাতে-হাতে দেবেন, নাকি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সোজা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে? অঞ্চলের নেতারা তার কতটা ভাগ নেবেন? তা হলে এখানে বুদ্ধি কোথায়? তা হল অর্থনীতির জটিল সূত্রাবলি বিশ্লেষণ করবে মানুষের হাতে এই টাকা পৌঁছোলে কী ভাবে দেশ বা সমাজ এগোবে, সেই অগ্রগতির সূচক কী? কিছু নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসে একটা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করার মধ্যে সংবাদমাধ্যমের রসদ আছে, এটুকুই। ঠিক এই লেখাটার মতো। যেখানে আমরা বিজ্ঞান বা পরিসংখ্যানে বিশেষ ঢুকছি না, বরং আপাত আলোচনা করছি এই বলে যে লক্ষ্মীর ভান্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, কিন্তু তার প্রচুর অসম্পূর্ণতা আছে। হয়তো বা তার থেকে একশো দিনের কাজ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মঙ্গলতর। কিন্তু এই সব তুলনামূলক বক্তব্য রাখলেও, এই লেখা স্রেফ অগভীর আলোচনার। এই দিয়ে কোনও