কালবাঁশি

রাত তখন ক'টা হবে, জানি না। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দ কানে এল! ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারলাম না, কে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। এমন সময় মনে হল কেউ যেন আমাকে ডাকছে, “ও মশাই, ও সুবীরবাবু, দরজাটা একটু খুলুন না!”

- জয় দী প বি শ্বা স

ব্রেকফাস্ট সেরে রিসর্টের বারান্দায় আরামকেদারায় বসে অলস ভাবে বর্ষাভেজা ডুয়ার্সের মোহময়ী রূপ দেখছিলাম। অফিস থেকে দিন পাঁচেকের ছুটি নিয়ে এসেছি শুধু ডুয়ার্সের বর্ষা উপভোগ করতে। বর্ষাকালে বন-জঙ্গল পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। তাই রিসর্টে জায়গা পেতে অসুবিধে হয়নি। গোটা রিসর্টে আমরা মাত্র দু'জন অতিথি। সারাটা দিন অখণ্ড অবসর। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই। এমন সময় ধূর্জটিবাবু বললেন, “আরে ও মশাই, অমন হাঁ করে দেখছেন কী? আপনি তো দেখছি বিভূতিভূষণকেও হার মানিয়ে দেবেন!” আমি লজ্জিত হয়ে বললাম, “আরে না না, কী যে বলেন! কোথায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর কোথায় আমি! আপনি কিছু বলছিলেন নাকি?”

ধূর্জটিবাবুর সঙ্গে আমার ট্রেনে আলাপ। একা, নির্ঝঞ্ঝাট, চাকুরিজীবী, পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ। প্রায়ই এ-দিকে ও-দিকে নিজের একটা অদ্ভুত নেশার টানে ঘুরে বেড়ান। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সব বিভিন্ন প্রান্তিক জনজাতি, সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন, তাদের সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত সংগ্রহযোগ্য জিনিস সংগ্রহ করে বেড়ান। কলকাতায় পদ্মবাগানের দুই কামরার ফ্ল্যাটের একটিতে উনি এই সব জিনিসের একটি ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা বানিয়েছেন। সেখানে সাঁওতালদের আরাধ্য দেবতা মারাংবুরুর রেপ্লিকা, গোণ্ড সম্প্রদায়ের বাদ্যযন্ত্র ‘জাতুর’– এমন সব নানা রকমের দ্রষ্টব্য ওঁর সংগ্রহে আছে। এ বার এ দিকে এসেছেন রাভা জনজাতির ব্যবহার করা একটি বাঁশি সংগ্রহের আশায়।

ধূর্জটিবাবু বললেন, “বলছি, কাল এক বার যাবেন না কি বাঁশিটি দেখতে ? আমি বললাম, “এই বৃষ্টিতে? পাগল নাকি!” ধূর্জটিবাবু নিজের পা দু'খানির দিকে তাকিয়ে বললেন, “উঁহু! আমার পা তো গোল নয়।”

তার পর এক গাল হেসে বললেন, “আহা! আপনাকে কি হাঁটিয়ে নিয়ে যাব নাকি? ব্রেকফাস্টের পর রিসর্টের ম্যানেজার সাহেবকে বলেছিলাম। উনি আশ্বাস দিয়েছেন, একটা গাড়ির বন্দোবস্ত করে দেবেন। চলুন না!” ভদ্রলোকের গলায় আন্তরিকতার ছোঁয়া! আমি বললাম, “জায়গাটা কোথায়?”