রামেশ্বরম থেকে ধনুষকোডি

অসম্ভব সুন্দর দু'টি পর্যটনকেন্দ্র রামেশ্বরম ও ধনুষকোডি। এখানে ইতিহাস, পুরাণ ও প্রকৃতি যেন মিলেমিশে গিয়েছে। ঘুরে এসে বর্ণনায় মানস মুখোপাধ্যায়।

- মানস মুখোপাধ্যায়।

সালটা ১৯৬৪। দিনটা ২৪ ডিসেম্বর। তামিলনাড়ুর | এই সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ । তখন ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। শহর জুড়ে চলছে বড়দিনের ব্যস্ততা। তখন আবহাওয়া বিজ্ঞান আজকের মতো উন্নত ছিল না। ফলে কোনও আগাম সতর্কতা পায়নি এখানকার মানুষজন। তাই তিনদিন আগের গভীর নিম্নচাপ শেষমেশ প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে আছড়ে পড়ে ধনুষকোডির মাটিতে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৪০ কিলোমিটার। সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করে নেয় এই গোটা জনপদকে। নিমেষের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সুন্দর সাজানো ধনুষকোডি। যা রাতারাতি পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। সেদিন প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় দুই হাজার মানুষ। পাম্বান থেকে আসা ধনুষকোডিগামী একটা আস্ত ট্রেন সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল। পাঁচজন রেলকর্মীসহ ১১০ জন যাত্রীর সলিল সমাধি হয়। তৎকালীন মাদ্রাজ সরকার ধনুষকোডিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল। সেই থেকে ধ্বংসস্তূপ বুকে নিয়ে জেগে আছে ভূতুড়ে শহর ধনুষকোডি। তার যেন বর্তমান নেই, আছে শুধুই অতীত। আর সেই অতীত আঁকড়েই সমুদ্র কল্লোলের মাঝে তার দিন কেটে যায়। দিনের পর নিঃসঙ্গ রাত আসে। রাতের পর ব্যথাতুর দিন। এই ভ্রমণকাহিনি শুরু অবশ্য মাদুরাই থেকে। তামিলনাড়ুর অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ শহর মাদুরাই। যার প্রধান আকর্ষণ মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বরী মন্দির। ব্যস্ততম এই শহরে সারা বছর পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। এই শহরেই এসেছি। আমাদের হোটেলের সম্মুখে মীনাক্ষী মন্দিরের প্রধান গোপুরম। তাই দিনে দিনেই মন্দিরসহ অন্যান্য স্থানীয় দ্রষ্টব্য দেখে নিলাম। তবে চোখে লেগে রইল ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি মীনাক্ষী মন্দিরের অনুপম স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। সকালে আমরা যাত্রা করেছিলাম দক্ষিণের কাশী রামেশ্বরম। মাদুরাই থেকে যার দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার।