শোলে সিনেমার গ্যারি সোবার্স !

৫০ বছর আগে এই ছবি রিলিজ করার সময় যে প্রজন্ম জন্মায়নি, তাদেরও সিনেমাবোধ ও ভারতীয় সিনেমার পড়াশোনায় আলাদা করে জায়গা করে নেয় শোলে। কী এমন জাদু আছে এই ছবিতে? ওটিটি-র যুগেও কীসের টানে এখনও শোলে দেখার খিদে জেগে থাকে? লিখছেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

- মনীষা মুখোপাধ্যায়।

বছর ২০ আগের কথা। তখন ২০০৫। আমরা সবে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মিশনারি স্কুলের কড়া শাসনের ঘেরাটোপ থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছি। তখনও মধ্যবিত্ত শহরতলিতে পনেরো-ষোলো বছর পেরলেই কিশোর-কিশোরীদের মনে হাওয়াবাতাসের দোষ লাগত। মেঘ ঘেরা তেমন এক দিনে শ্রীরামপুর ধোবি ঘাটের কাছে দেবাশিস কুণ্ডু (ডি.কে)-র বায়োলজি ক্লাস! এলাকার দুদে শিক্ষক। টেস্টের পর থেকেই কেরিয়ারিস্টিক মা-বাবা ওখানে ছেলেমেয়ের নাম লেখান আজও। সেদিন গঙ্গার দিক থেকে মিশমিশে কালো একটা মেঘ এসে আটকে গিয়েছে শ্রীরামপুরের আকাশের মাঝ বরাবর। উল্টোপাল্টা হাওয়া দিচ্ছে। তখনকার বয়স অনুপাতে এ পরিবেশ মোটেই শান্তির নয়। কোচিংয়ে ঢোকার আগে বাইরের লন-এ ছেলেমেয়েদের জটলা চলছে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটু দূরে দাঁড়ানো অনুপম এক দৃশ্যের দিকে। আটকে থাকা মেঘের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ব্যাচের সিরিয়াস ছাত্র শুভজিৎ। তাকে ঘিরে রেখেছে ব্যাচেরই তিন-চারজন বন্ধু। হাত-পা নেড়ে নানা কিছু বোঝানো চলছে। দেখেই মালুম, বেশ কঠিন সিলেবাস নিয়ে কথা হচ্ছে। ওই বয়সে জয়েন্টের চেয়েও কঠিন সিলেবাস প্রেমের। কতগুলো সংলাপ ভেসে এল।

‘আরে তুই এবার তো বল!” ‘এই কাজটা তো আমরা করতে পারব না, এটা তোকেই করতে হবে!” ‘মেয়েটা কী ভাবছে বল তো? অন্য কাউকে হ্যাঁ বলে দিলে তখন বুঝবি !” ‘অন্য কাউকে’ শব্দটা কানে যেতেই একটু কেঁপে উঠল কি ছেলেটা? কে জানে! শুধু দেখলাম, এরপর তাকে ধরে রীতিমতো ধমকাচ্ছে তারই এক বন্ধু। রীতিমতো স্মার্ট, অনুনকরণীয় ভঙ্গিতে সে বলে উঠল ভারতের সেরা পাঁচ ডায়লগের একটি! ‘জানিস না, 'যো ডর গয়া, সমঝো মর গয়া'!” ব্যস! তরঙ্গ খেলে যেন ধারেকাছে কোথাও! কমন ডায়লগ । সহস্র নিযুতবার শোনা। তবু ওই মেঘলা বিকেলে আমারই বয়সি এক কিশোরের মুখে এই সংলাপ শুনে চকিতে চমকে উঠলাম। পরে বুঝেছি এই সংলাপের গায়ে পেটেন্ট হয়ে লেগে রয়েছে বাঙালির প্রথম প্রেম প্রস্তাবের জন্য সঞ্চিত সাহস কিংবা জীবনজুড়ে ছকভাঙা কোনও ঝুঁকি নেওয়ার স্পর্ধার ঘ্রাণ। সৌজন্যে 'শোলে'। ওয়ান অ্যান্ড ওনলি শোলে।