তাঁর ব্যক্তিত্বের সামনে বড় পরিচালকও গুটিয়ে যেতেন

‘কেন আমি সারাজীবন শুধু টিপিক্যাল ভালো বাঙালি মেয়েদের চরিত্রগুলোই করে গেলাম? আমাকে যদি ‘সপ্তপদী'র রিনা ব্রাউনের চরিত্রটা দেওয়া হতো, আমি কি পারতাম না? পারতাম না হাই হিল আর মেমসাহেবের মতো স্কার্ট পরে অভিনয় করতে?’

- 

• সুচিত্রা সেনকে আমি প্রথম দেখি 'কাজরী' ছবির সময়। পরিচালক নীরেন লাহিড়ী। সময়টা ১৯৫২ সাল। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের কথা। তখন ‘কাজরী'র শ্যুটিং সবে শুরু হয়েছে। সেদিন শ্যুটিং চলছিল ইস্ট ইন্ডিয়া স্টুডিওয়। স্টুডিওটা ছিল টালিগঞ্জের ম্যুর অ্যাভিনিউয়ে। এখন এর অস্তিত্ব আছে কি না আমি সঠিক বলতে পারব না। অনেকটা জায়গা নিয়ে খুব সুন্দর স্টুডিও। একটা বিরাট বাগানবাড়ির মতো। দুপুরবেলায় শ্যুটিংয়ের ফাঁকে কয়েকজনের সঙ্গে স্টুডিওর মাঠে বসে গল্প করছিলাম। সে সময় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামল। আর সেই গাড়ি থেকে নেমে এলেন সুচিত্রা সেন। তাঁর সঙ্গে স্বামী দিবানাথ সেন ও ফুটফুটে একটি মেয়ে, মুনমুন। সুচিত্রা সম্ভবত পরিচালক নীরেন লাহিড়ীর কাছে জানতে এসেছিলেন শ্যুটিংয়ের জন্য তাঁকে কবে আসতে হবে। নীরেনবাবু তাঁকে একটু অবাক হয়েই বলেন, ‘আজ তো আপনার শ্যুটিং নেই। আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে আসতে হবে।' সেদিনই শ্রীমতী সেনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। সেসময় তিনি 'সাত নম্বর কয়েদি' ছবিরও শ্যুটিং করছেন। আসলে আমি খুব কম বয়সে অভিনয় জগতে এসেছি। যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময় ঈশ্বরের আশীর্বাদে দর্শকমহলে আমার মোটামুটি একটা পরিচিতি হয়ে গিয়েছে। শ্রীমতী সেন আমার পরে অভিনয়ে এলেও বয়সে বড় ছিলেন। আমাকে সাবিত্রী বলে ডাকলেও আমি কিন্তু তাঁকে রমাদি বলতাম। আবার কখনও কখনও সুচিত্রাদি। 'কাজরী’ ছবির শ্যুটিংয়ের একদিনের একটা ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে। ঘটনাটা দুঃখজনক হলেও বলতে ইচ্ছে করছে। শ্যুটিং চলছে। বেণুদা অর্থাৎ নীরেন লাহিড়ী কেন জানি না হঠাৎ রেগে গেলেন রমাদির ওপরে। তারপর সবার সামনে ওঁকে একটু বকুনি দিয়েই বললেন, ‘ক্যামেরার সামনে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারেন না, সিনেমার লাইনে এসেছেন কেন?' কথাগুলো শুনতে আমারও খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু পরিচালকের মুখের ওপর তো আমি কিছু বলতে পারি না। রমাদিকে দেখেও সেই মুহূর্তে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। লক্ষ করলাম, এ কথাগুলো শোনার পরে লজ্জায় ও অপমানে গাল দুটো লাল হয়ে গিয়েছে তাঁর। মনে মনে ভাবলাম, বেণুদা এতগুলো লোকের সামনে এত কঠোরভাবে না বললেই পারতেন। অবশ্য আগেকার দিনের পরিচালকরা এভাবেই বলতেন। কারণ, নায়কনায়িকা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তাঁরা অভিনয়ের ছাত্রছাত্রী বলেই মনে করতেন। অভিনয় পছন্দ না হলে ঝাঁ ঝাঁ করে মুখের ওপর সরাসরি বলে দিতেন।