শীতের রূপকথা

শীত মানেই পিকনিক, পিঠে পরব। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এক মায়াবী রূপকথা। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।

- অনিরুদ্ধ সরকার।

সূর্য তখনও ওঠেনি। শীতের কুয়াশা মোড়া দিনে চায়ের দোকানের আড্ডায় দুই বৃদ্ধের কথা হচ্ছে। একজন আক্ষেপের সুরে বললেন, 'এখন গ্রামের মানুষের জীবনও শহরের মতো হয়ে গেছে। শপিং মল, বড় ফ্ল্যাট বাড়ি, নিরন্তর গাড়ির ধোঁয়া গ্রামবাংলাকেও আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।” শুনে আর একজন বললেন, 'সংস্কৃতি আসলে ভুলে যাওয়ার বিষয় নয়। তা কোনও না কোনওভাবে ফিরে আসে। উত্তরে প্রথম বৃদ্ধ বললেন, ‘সবকিছু ফিরে আসে না। বেশিরভাগই হারিয়ে যায়। বিলুপ্ত হয়ে যায়। হয়তো গ্রাম বাংলার শীতও দেখবে একদিন শহরের মতোই হারিয়ে যাবে ! যেমন হারিয়ে গিয়েছে সবুজ গাছপালা।'

কসমোপলিটান সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ কলকাতার শীত নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। সেই ধরাবাঁধা ছকে পার্ক স্ট্রিটের বড়দিন, ছুটির দিনের ভিক্টোরিয়া কিংবা চিড়িয়াখানা। একটু নস্টালজিয়ায় ভেসে ট্রামে চড়া, ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে উঠে দক্ষিণেশ্বর কিংবা বেলুড় মঠ। নিউ মার্কেটের নাহুমসের কেক অথবা ফ্লুরিসে ব্রেকফাস্ট। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ইডেন টেস্ট। শীত শেষে বইমেলা।

ব্রিটিশ আমলে কলকাতায় ইংরেজরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে বড়দিন উদযাপন করত। ইংরেজদের রাজধানী দিল্লিতে সরে যাওয়ার পরেও বড়দিনের উৎসব উদযাপনের জন্য দল বেঁধে ইংরেজরা প্রতি বছর কলকাতায় চলে আসতেন। কলকাতার বাবুদের কল্যাণে বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল বড়দিনের উৎসব। জন্মাষ্টমীর নাম অনুসারে বড়দিনের নাম দেওয়া হয় “খ্রিস্টাষ্টমী'। শীতকাল এলেই বড়লাটের বাসভবনে গার্ডেন পার্টির আয়োজন হতো। বিদেশি অতিথি ছাড়াও ভারতীয় রাজপরিবার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যরা এসব পার্টিতে আমন্ত্রণ পেতেন। সেই গার্ডেন পার্টিই ধীরে ধীরে পিকনিকের নাম নিল।

আমরা শহর ছাড়িয়ে যাব গ্রামবাংলায় শীতের খোঁজ নিতে। শীতের বায়োস্কোপ দিয়েই শুরু করি। শীতের দিনে গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটে, মেলায় বায়োস্কোপের দেখা মিলত। তা দেখতে ছেলে-বুড়োদের ভিড় উপচে পড়ত। রংবেরঙের চলতি ছবির এই বাক্সের লেন্সে চোখ লাগিয়ে দেশ-বিদেশের অজানা দৃশ্য দেখার সুখ মিলত। দিন বদলের সঙ্গে এল টিভি, তারপর মোবাইল স্ক্রিনেই ধরা দিল বিশ্ব! আর হারিয়ে গেল বায়োস্কোপ