শতবর্ষের আত্মপ্রতিকৃতি

ফ্রানজ় কাফকার উপন্যাস দ্য ট্রায়াল অতিক্রম করল ১০০ বছর। আধুনিক সময়ের প্রেক্ষিতে ফিরে দেখা এই বহুল আলোচিত উপন্যাসের প্রাসঙ্গিকতা।

- পা য়ে ল সে ন গুপ্ত

আমরা যাই নি মরে আজও— তবু কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়: মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে, প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন— এখনও ঘাসের লোভে চরে পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর 'পরে। প্যারাফিন-লণ্ঠন নিভে গেল গোল আস্তাবলে। সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে; এই সব ঘোড়াদের নিওলিথ-স্তব্ধতার জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে। (ঘোড়া: জীবনানন্দ দাশ)

নিওলিথ স্তব্ধতা আসলে পৃথিবীব্যাপ্ত সময়ের খেরোর খাতা, আমাদের অস্তিত্বের অদৃশ্য প্রতিলিপি। এই স্তব্ধতা থেকেই কোনও এক কার্তিকের জ্যোৎস্না অথবা দেশ-কাল-সীমান্ত পেরিয়ে দৃশ্য জন্মাতে থাকে। প্রথমে দৃশ্য, তারপর প্রবাহ। পরের পর দৃশ্য থেকে সৃষ্টি হয়ে যায় কালাতিক্রমী ইতিহাস। ১৯৩০-এর আশপাশে গ্রামবাংলার কোনও এক জ্যোৎস্নাভেজা মুহূর্তে এই কবিতাটি রচিত হচ্ছে, তার কয়েকবছর আগেই হয়তো অস্ট্রিয়ার এক তুষারসিক্ত দিনে ভিজে যাচ্ছে অসংখ্য সৃষ্টি ও সৃষ্টির দ্বন্দ্ব। ভৌগোলিক দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, সময়ের সেতুতে নৈকট্য রয়েছে কাফকা ও জীবনানন্দের। ১৯২৪-এ শেষ হয়েছে ফ্রানজ কাফকার স্বল্পায়ু পার্থিব জীবন। কিন্তু বন্ধু ম্যাক্স ব্রড কাফকার অনুরোধ উপেক্ষা করে মৃত্যুর পরে একের পর এক প্রকাশ করেছেন তাঁর সৃষ্টিগুলি। কাফকার উপন্যাস দ্য ট্রায়াল ক্রমাগত দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে ১০০ বছর, ১৯২৫-এর এপ্রিল থেকে ২০২৫এর জুলাই, কাফকার জন্মমাসও বটে। তৈরি হয়েছে আত্মসমীক্ষার নতুন সমীকরণ, তাও এক ধরনের Der Prozess (The Trial) |

দৃশ্যপট ১: ১৯৭৫-এর কাম্বোডিয়া। খামের রুজ় পার্টি ক্ষমতায় আসার পর এক লক্ষেরও বেশি দেশের মানুষকে বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিধ সন্দেহে হত্যা করা হয়েছিল। কবে, কখন, কীভাবে তারা শাসক গোষ্ঠীর কাছে দেশদ্রোহী হয়ে উঠেছিল, জানা যায়নি। নাৎসি জেনোসাইড ও হলোকস্টের এ-ও এক নতুন পরম্পরা ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে এই বিপুল হত্যালীলার নায়ক পল পট-এরও বয়স হল ১০০।