আমার মাম্মি

সিনেমা ছেড়ে দুই মেয়েকে মানুষ করাই জীবনের ব্রত বলে ধরে নিয়েছিলেন অঞ্জনা ভৌমিক। কেমনভাবে থাকতেন বাড়িতে? আদরের মাম্মির স্মৃতিতে কলম ধরলেন কন্যা নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত

- 

আমার মাম্মি অঞ্জনা ভৌমিক যে সিনেমার এত বড় অভিনেত্রী, সেটা আমি অনেক পরে জেনেছি। উনি বাড়িতে এতটাই সাধারণ থাকতেন এবং এমনভাবে নিজেকে এই গ্ল্যামারের জীবন থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন যে, আমাদের দুই বোন কোনওদিন এর আঁচ পাইনি। আর পাঁচজন সাধারণ মা যেমন হন, মাম্মি ঠিক তেমনই ছিলেন। আমার বাবা তো বাংলার গভর্নরের এডিসি ছিলেন, তাই বাইরে থাকতেন। মাম্মি মুম্বইতে আমাদের সমস্ত কিছুর দেখভাল করতেন। আমাদের একটা ওল্ড ফিয়াট গাড়ি ছিল। তাতে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন, নিয়ে আসতেন। ইন ফ্যাক্ট, বাড়ির সব কাজ নিজের হাতে করতেন। ঘর পরিষ্কারের একটা লোক ছিল বটে, কিন্তু রান্নার লোক কোনওদিন আমি দেখিনি। মাম্মি নিজের হাতে বঁটিতে কুটনো কোটা থেকে শুরু করে সমস্ত রান্না করতেন। প্রতি শনিবার আমাদের চাইনিজ রান্না করে খাওয়াতেন। সেটা মাঞ্চুরিয়ন হোক, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার চিকেন, নুডলস বা রাইস। একটা গোল ওভেন ছিল। তাতে কেকও তৈরি করতেন। তখন তো অত বাইরে, কোনও বড় হোটেলে পার্টি দেওয়া যেত না, বাড়িতে আমাদের জন্মদিন হলে, উনি নিজের হাতে সব সাজাতেন এবং অতিথিদের জন্য রান্নাও করতেন। ফলে কোনওদিন সেভাবে কিছু বুঝিনি। তবে সিনেমা নিয়ে মাম্মির অতিরিক্ত উৎসাহটা বাড়িতে দেখতাম। সত্যি বলতে কী, উনি দেশি-বিদেশি সিনেমার তথ্যের ব্যাপারে এনসাইক্লোপিডিয়া ছিলেন বলা যায়। কোন বছরের কোন সিনেমা, তার পরিচালক থেকে শুরু করে সঙ্গীত পরিচালকের নাম কী, মুখে মুখে বলে দিতে পারতেন। বাবার সঙ্গে রীতিমতো কুইজ় চলত এই নিয়ে। মাম্মির সংগ্রহে থাকা দুষ্প্রাপ্য ওয়র্ল্ড সিনেমার কত বই যে এখনও বাড়িতে আছে... সব রেখে দিয়েছি। মাম্মি যে বেশ কেউকেটা, সেটা বুঝতে পারতাম, যখন আমরা কলকাতায় আসার জন্য এয়ারপোর্টে যেতাম। প্রতি বছরের গরমের ছুটিতে কলকাতায় আসাটা আমাদের বাঁধা ছিল। এয়ারপোর্টে গেলে দেখতাম, সকলে ওঁকে ঘিরে অটোগ্রাফ চাইছে! তাছাড়া একটু বড় হওয়ার পরে বুঝতে পারলাম, সিনেমা জগতের লোকেরা মাম্মিকে বেশ ভালবাসেন। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। চপস্টিকস বলে একটা রেস্তরাঁ ছিল, সেখানে দেখতাম তনুজা আন্টির সঙ্গে মাম্মি আড্ডা দিচ্ছেন। শশধর মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো এ