ভাষা ভাবনা

ভাষা একটা জ্যান্ত জিনিস। ব্যবহারে ব্যবহারে তার শব্দভাণ্ডার পাল্টায়, অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞতায় তার অভিব্যক্তি পাল্টায়। লিখছেন অভীক মজুমদার।

- অভীক মজুমদার।

ঝটপট কয়েকটা বাংলা শব্দের দিকে তাকানো যাক। অবহু, জুল, পালোয়ার, শফ, সেফত। আমি নিশ্চিত, একটারও অর্থ আমাদের কারও জানা নেই। সে সবের হদিশ। মিলবে বিশ্বনাথ জোয়ারদার সঙ্কলিত গ্রন্থ “অচলন্তিকা' নামক অভিধানে। কিসের অভিধান? এ হল বাংলা অচলিত এবং লুপ্ত শব্দের অভিধান। পাতায় পাতায় যেন নিজের ভাষাকেই ইতিহাসের আনাচকানাচ বেয়ে চিনে নিতে পারা যায়। যেমন ধরা যাক, জুল মানে হল প্রতারণা, ধাপ্পা। পালোয়ার শব্দের অর্থ খড়বিচুলি বহন করার নৌকো। শফ হল গবাদি পশুর খুর। সেকত শব্দের অর্থ প্রশংসা বা গুণকীর্তন। আজকের যুগে এসব শব্দের কোনও ব্যবহারই নেই। যে কোনও ভাষার এই এক আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে পাল্টাতে থাকে। সেখানে নতুন শব্দ সংযোজিত হয়, কিছু শব্দ মুখের ভাষা থেকে হারিয়ে যায় চিরতরে। এসব ঘটনা ঘটে, একথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এইসব ঘটনা চোখে পড়লেও, আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, এদের লুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণটা ঠিক কী। অভিজ্ঞতার পরিবর্তন হয়তো এর একটা কারণ। কলকাতা শহর থেকে ঘোড়ার গাড়ি বিলুপ্ত হয়ে গেল, ফলে কোচোয়ান, সহিস, কোচম্যান— এইসব শব্দ ধীরে ধীরে মানুষের কথ্যভাষা থেকে হারিয়ে গেল অচিরেই। আর একটা কথা, ভাষা আসলে এগয় মূলত কথ্য ভাষা বা মুখের ভাষার মাধ্যমে। লেখ্য বা লিখিত অবয়বে তার প্রভাব আসে অনেক পরে। ফলে যে কোনও ভাষার পরিবর্তন বা রূপান্তরকে সযত্নে লক্ষ করা যাবে মৌখিক ভাষার চলনের দিকে তাকালে। এত কথা বলছি, তার মোদ্দা উদ্দেশ্য হল বোঝানো, যে, ভাষা একটা জ্যান্ত জিনিস। ব্যবহারে ব্যবহারে তার শব্দভাণ্ডার পাল্টায়, অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞতায় তার অভিব্যক্তি পাল্টায়, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকভৌগোলিক নানা কারণেই তার আকার প্রকার বদলে যায়।