মোহ

চমকে ওঠে দেবাঞ্জন। কেমন একটা ঘোর ঘোর ভাব। মোবাইলের শব্দটা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে তার। চেতনায় ফিরে বেশ বিভ্রান্ত সে। নিজেকে আবিষ্কার করে ক্যানভাসের সামনে। তার মানে এতক্ষণ কল্পনায় ডুবে গিয়েছিল সে!

- 

অদিতিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ বিরক্ত হয় দেবাঞ্জন। অস্বস্তিও গ্রাস করে তাকে। সে জানে কেন অদিতি দাঁড়িয়ে। কিন্তু তাকে খুশি করার মতো জবাব তার কাছে নেই। অনেকবারই ভেবেছে কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দেবে। এমনকী এও ভেবেছে, তাকে আসতে বারণ করে দেবে। কিন্তু পারেনি। মেয়েটির মুখোমুখি এলে ভিতরে ভিতরে কেমন দুর্বল হয়ে পড়ে। অদ্ভুত এক আকর্ষণ শক্তি আছে অদিতির। সেটাই দেবাঞ্জনের অস্বস্তির কারণ।

বেশ কিছুদিন ধরে অদিতির মধ্যে অদ্ভুত কিছু আচরণ দেখছিল দেবাঞ্জন। আঁকা ভুলে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, অনিচ্ছার ভান করে তার হাত স্পর্শ করা, ইচ্ছাকৃত ভাবে আঁকতে অনেক বেশি সময় নেওয়া, ছুটির পরও অনর্থক দাঁড়িয়ে থাকা, বিষয়ের বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলা— এমনই অনেক কিছু। এসব নিয়ে প্রথমটা তেমন পাত্তা না দিলেও, একটা সময় তাকে ভাবিয়ে তোলে। অদিতির চোখের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয় না। পরোক্ষ ভাবে তাকে কিছুটা বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। দিনের পর দিন অদিতির এই আচরণ বাড়তে থাকে। গত কয়েকদিনে আর কোনও রাখঢাক নেই, যা সন্দেহ করেছিল সেটাই শেষপর্যন্ত সত্যি হল।

কয়েকদিন ধরে অদিতি দেবাঞ্জনকে বেশ কিছু মেসেজ করছে। প্রথমটা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে দেবাঞ্জন, এইরকম মেসেজ না করতে। কিন্তু অদিতি কথা শোনেনি। একের পর এক মেসেজ করে গেছে। বিব্রত দেবাঞ্জন শেষদিকে আর কোনও জবাব দেয়নি।

সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। ঘরের মধ্যে সে আর অদিতি। অস্বস্তি হচ্ছিল দেবাঞ্জনের। অদিতির রাগ-অভিমানমাখা মুখ সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। নিজেকে বোঝায় দেবাঞ্জন, দুর্বল হলে চলবে না। মনকে শক্ত করে। 'কী হল, তুমি এখনও দাঁড়িয়ে কেন?'

‘আমার কিছু কথা আছে তোমার সঙ্গে।' সবার সামনে 'আপনি' সম্বোধন করলেও, অন্যসময় তাকে ‘তুমি' সম্বোধন করে অদিতি। দেবাঞ্জন তাকে অনেকবার বলেছে 'তুমি' না বলতে, কিন্তু অদিতি শোনেনি। অদিতির মুখে 'তুমি' সম্বোধন শুনলে বুকের ভিতর অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়, দুর্বলতা অনেকটা বেড়ে যায়। দেবাঞ্জন স্থির করে, আজ কিছুতেই দুর্বল হবে না।