গোলক পরাজিত

গোলকনাথ মুখোপাধ্যায়, তরুণ এক গোয়েন্দা, খুনের রহস্যভেদে নেমে পড়ে মল্লিকবাড়ির অন্ধকার গোপন জগতে। চতুরতা, যুক্তি আর তীক্ষ্ণ নজর—এই তিন অস্ত্রে উন্মোচিত হয় মুক্তারাম মল্লিকের মৃত্যুর আসল রহস্য।

- স্ম র ণ জিৎ চক্রবর্তী

আজ ভোরবেলা বর্ধমান থেকে ফিরে এসেছে কনকমালা। আর ফিরেই সোজা চলে এসেছে গোলকের ঘরে।

গোলক বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। ওকে দেখে কাগজটা গুটিয়ে রাখল। কনকমালা হইহই করে বলল, “এর মধ্যে একটা কেস এসেছিল? আর তুমি নাকি খুনিকে ধরতে পারোনি? যদুনাথ স্যর বললেন। রাস্তায় দেখা হয়েছিল। সত্যি?” গোলক মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ। আমি পরাজিত হয়েছি।” “কী করে ‘পরাজিত’ হলে শুনি?” কনকমালা চৌকিতে গুছিয়ে বসল, “সবটা বলো দেখি গল্পের মতো করে।” গোলক হাসল। তার পর বলল, “ঠিক আছে, একদম গল্পের মতো করেই বলছি। শোনো। কয়েকদিন আগে

এক গায়ের চাদরটা ভালভাবে জড়িয়ে পুলিশের গাড়ি থেকে নামল গোলক। সামনেই মল্লিক বাড়ির বিরাট লোহার গেট। সেখানে দু'জন পুলিশ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে রবি রায়। দারোগা যদুনাথ রায়ের অধস্তন এই রবি রায়। গোলককে একদম পছন্দ করে না।

যাঁরা জানেন না তাঁদের জন্য বলি, গোলকনাথ মুখোপাধ্যায় একজন সদ্য-যুবক। পূর্ববঙ্গের চাঁদপুরের বহরিয়া গ্রাম থেকে এসে কলকাতায় পড়াশোনা করেছে। গোলক বর্তমানে লালমোহন রায়চৌধুরীদের বাড়িতে থাকে ও তাঁদের কাছেই চাকরি করে। কিন্তু এর পাশাপাশি ও গোয়েন্দা হিসেবেও ক্রমে নিজের পরিচিতি তৈরি করছে। পুলিশের দারোগা যদুনাথ রায় মাঝেমাঝেই গোলকের সাহায্য নেন। গোলক, পুলিশ বিভাগের কনসাল্টিং ডিটেকটিভ হিসেবে ক্রমশ প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

আজও গোলককে যদুনাথ নিয়ে এসেছেন এই মল্লিক বাড়িতে। কারণ কাল রাতে এই বাড়ির মালিক মুক্তারাম মল্লিক খুন হয়েছে। প্রিন্স অফ ওয়েলস, জর্জ কলকাতায় আসছেন। ময়দানে একটা স্মৃতি সৌধ হবে রানি ভিক্টোরিয়ার স্মরণে। নাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এই জানুয়ারির চার তারিখে তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রিন্স অফ ওয়েলস। অনুষ্ঠানের এখনও দু'দিন বাকি আছে। কিন্তু রাজকুমার আসছেন বলে পুলিশের ব্যস্ততা চরমে।

এখানে আসার পথে যদুনাথ ওকে বলেছেন, “শুনেছি মুক্তারাম মল্লিক একজন অত্যন্ত নোংরা লোক। মারা গিয়েছে, বাঁচা গিয়েছে। কিন্তু এসব তো আর সবার সামনে বলা যায় না। যতই হোক, ক্রাইম হয়েছে একটা। আমাদের ব্যবস্থা নিতেই হবে। কিন্তু পুলিশের এখন অনেক ব্যস্ততা। আমি থাকতেও পারব না। আমি তিন জন সেপাই দেব। তুই দেখ খুনিকে ধরতে পারিস কিনা।”