চলচ্চিত্র-শিল্পে মানব সমাজের প্রতিফলন

বাংলা ছবির এই দৈন্যদশার কথা জানতে পেরে হতাশ হলাম। সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে, তবে এর সমাধানও রয়েছে। আমাদের সাম্প্রতিক জীবনযাপনের ছবি পর্দায় ধরা গেলে আজও ভাল ছবি হতে পারে।

- 

• সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে 'বাংলা চলচ্চিত্রের অধোগতি' শীর্ষক প্রচ্ছদনিবন্ধ শীর্ষক সংখ্যাটি (২ জুলাই, 2025)। সেই প্রসঙ্গে মনে হওয়া কিছু কথা জানাতেই এই পত্রের অবতারণা। চলচ্চিত্রের প্রধান উপকরণ হল মানবজীবন—প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় এই অভিমত পোষণ করেছিলেন। চলচ্চিত্র বিষয়টি সম্পর্কে। মানব সমাজের প্রতিটি পরিবর্তন চলচ্চিত্র-শিল্পের বিকাশের পথে চিহ্ন রেখে গেছে বার বার। আবার আমরা জানি মানব চরিত্রের সুকুমার ভাবনার প্রকাশই শিল্প। সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক ইত্যাদি শিল্প মাধ্যমের মতোই চলচ্চিত্র শিল্প মাধ্যমের একটি নিজস্ব ভাষা, তার একটি নিজস্ব ইতিহাসও রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে একটি নিজস্ব নন্দনতত্ত্ব। এক বার তরুণ মজুমদার বলেছিলেন, “একটা ভাল ছবিতে সংলাপের স্পেস যতটা সম্ভব কম থাকা উচিত। যা তুমি ছবি দিয়ে বোঝাতে পারছ না, হাজার চেষ্টা করলেও সংলাপের বাহুল্য দিয়ে তা বোঝাতে পারবে না।”

চলৎশক্তিহীন অসংখ্য ছবি দ্রুত গতিতে পর পর সাজানো—এ হেন চিন্তার জন্ম হয় ফ্রান্সের প্যারিস শহরে। জন্ম হয় চলচ্চিত্রের। এই চলচ্চিত্রের ভাষা যেমন সাবলীল, তেমনই শক্তিশালী। অথচ বর্তমানে বিজ্ঞান-নির্ভর সভ্যতায় চলচ্চিত্র-ব্যবসার প্রতিযোগিতার যে-পথ ধরে হেঁটে চলেছে সমস্ত মানব সমাজ, তার পরিণতি কতটা উজ্জ্বল, ভাবলে বিস্ময় জাগে। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে চলচ্চিত্রের ভাষা কি লঘু হয়ে যেতে বসেছে ক্রমাগত? অপূর্ণতা চলচ্চিত্রের এক ভাষা, যা শিল্পত্ববিধানের সম্ভাবনার কথা বলে। এই সম্ভাবনা কি হারিয়ে গেছে এই রাজনীতিময় চলচ্চিত্র সংগঠনে? পরিশেষে বলি, সকল পরিচালক, প্রযোজক সংস্থার কাছে একান্ত নিবেদন, এই শক্তিশালী মাধ্যম, যা সাধারণ মানুষের কাছে খুব সহজে তুলে ধরতে পারে সমাজের আলো-অন্ধকার তাকে বিকিয়ে দেবেন না রাজনীতির কাছে। লঘু করে দেবেন না এই শক্তিশালী মাধ্যমটির চারিত্রিক গুণাবলি। এই সত্যতার বিরুদ্ধচারণ করা না-গেলে তা হবে সত্যিই দুঃখজনক। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আজও আমাদের এই সুযোগ দেয়। যেন সমস্ত দেশ-বিদেশের সকল পরিচালক, শিল্পীদের মধ্যে আদান-প্রদান ঘটে ভাবনার। বিজ্ঞান-সভ্যতার যুগে এই ভাবনার স্থায়িত্বই আমাদের চলচ্চিত্র-শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্দেশ করবে। শর্মিষ্ঠা ঘোষ, উত্তর চব্বিশ পরগনা-৭০০১১২