মধ্য-প্রাচ্যে আমেরিকার হস্তক্ষেপ

ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর নীতি এখন অনেক ক্ষেত্রেই শান্তি বিরোধী। মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপের সুযোগ তিনি ছাড়বেন না।

- ইমনকল্যাণ লাহিড়ী

মধ্য-প্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে ইজরায়েল ও ইরান বহু দশক ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে শক্তি-প্রয়োগ ও উত্তেজনার নানা স্তর পেরিয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইরানের নজিরবিহীন ড্রোন-মিসাইল হামলা এবং 2025 সালের মাঝামাঝি ইজরায়েল-ইরানের সরাসরি লড়াই, দু'টিই আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোকে ভেঙে ফেলেছে। এই সংঘাত যেমন তেল ও বাণিজ্য পথকে ঝুঁকিতে ফেলেছে, তেমনই আমেরিকার সক্রিয় সামরিক-কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরে ইরান-ইজরায়েল সম্পর্ক চিরতরে শত্রুতায় রূপ নেয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, লেবাননের হিজবুল্লা ও সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতি—এই তিন স্তম্ভে দ্বন্দ্বের ভিত্তি গড়ে ওঠে। ইজরায়েল বার বার ইরানের ‘পরমাণু ব্রেক-আউট' সম্ভাবনাকে অস্তিত্বগত হুমকি বলে চিহ্নিত করেছে। ইরান পাল্টা যুক্তি দিয়েছে যে, ইজরায়েলই আঞ্চলিক আগ্রাসনের প্রধান চরিত্র। ২০০০-এর শুরুর দশক থেকে শুরু হওয়া সাইবার হামলা, বিজ্ঞানী হত্যা, সিরিয়া-ভিত্তিক একাধিক বিমানহানা—সবই ‘ছায়াযুদ্ধ' (shadow war)-র অংশ ছিল। কিন্তু 2028 সালের ১ এপ্রিল, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে সন্দেহভাজন ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এই দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্য যুদ্ধঘোষণার মুখোমুখি এনে দাঁড় করায়।

ইরানের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক পাল্টা আঘাত ঘটে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। ১৩ এবং ১৪ এপ্রিল ইরান প্রায় ৩০০ ড্রোন ও ব্যালিস্টিক-মিসাইল উৎক্ষেপণ করে ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে—যার ফলে ইরানইজরায়েল দ্বন্দ্বে প্রথম সরাসরি যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ইজরায়েল ও আমেরিকা-সহ সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই সময় ইরানের ছোড়া বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ-আকাশে গুঁড়িয়ে দেয়, যদিও হামলার পরিণতিতে মধ্য-প্রাচ্য তেলবাণিজ্যপথে অস্থিরতা বেড়ে যায়। এই হামলার পর আমেরিকার হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের সমন্বয়ে ‘আঞ্চলিক সতর্কাবস্থা' জারি হয়। আমেরিকা-নিয়ন্ত্রিত স্থল ও নৌ-ঘাঁটিতে আয়রনডোম-সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাট্রিয়ট ও থাড ব্যাটারি মোতায়েন করে ইরানের দ্বিতীয় বার আক্রমণ আটকানোর ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট জানিয়ে দেন—ইজরায়েল 'নিজেদের রক্ষার অধিকার রাখে'। তবে ‘উগ্র প্রতিশোধ' নয়, বরং ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ' জবাবই ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা।