সময়ের এক অনন্য দৃষ্টা

ল্যাটিন আমেরিকার রক্তাক্ত স্বৈরতন্ত্রের বিভীষিকা ও এক কিশোরীর জীবনের করুণ ট্র্যাজেডি ফুটে উঠেছে 'ফিস্ট অফ দ্য গোট' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে। মারিও ভার্গাস ইয়োসার রাজনৈতিক বাস্তববাদী লেখনী আমাদের টেনে নিয়ে যায় ইতিহাসের এক নির্মম অধ্যায়ে।

- অ পিতা মু খো পা ধ্যায়ে

প্রায় সতেরো আঠারো বছর আগে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একটা ফিল্ম নিয়ে খুব হইচই পড়ে গিয়েছিল। ভয়ানক নিষ্ঠুরতা হিংসা হানাহানিতে ভরা একটি রক্তাক্ত ফিল্ম। সেই ফিল্মের দৃশ্যগুলি আমাকে আমূল বিদ্ধ করে। ডমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী শাসক রাফায়েল ত্রুখিইয়ো-র (শাসনকাল ১৯৩০-১৯৬১) জীবনের সত্য ঘটনা ভিত্তি করে মারিও ভার্গাস ইয়োসার (২৮ মার্চ, ১৯৩৬-১৩ এপ্রিল, ২০২৫) লেখা একটি উপন্যাস ফিস্ট অফ দ্য গোট (২০০০ সালে প্রকাশিত)। সেই উপন্যাসটির সার্থক চলচ্চিত্রায়ন (পরিচালক: লুইস ইয়োসা) দেখে দর্শক স্তম্ভিত, বাদ্ধ। বাস্তব এমনও হয়? তিনটি কাহিনির অন্তর্ভুননে উপন্যাসটি নির্মিত। প্রথম কাহিনিসূত্র একনায়ক ত্রুখিইয়োর (তাকেই Goat / Chivo নামে অভিহিত করত ডমিনিকানরা) অস্বাভাবিক, অত্যাচারী, বিকৃতকাম জীবন আর দ্বিতীয় কাহিনি ত্রুখিইয়োর ঘনিষ্ঠজনের তাকে হত্যার পরিকল্পনা। ১৯৬১ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়। ইয়োসা ডমিনিকান রিপাবলিকে কয়েক মাস থাকাকালীন যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। ইয়োসা নিজেই বলেছেন সংগৃহীত তথ্যের সামান্য অংশই তিনি ব্যবহার করেছেন। আর সেখান থেকেই প্রকৃত বাস্তবের ভয়াবহতা আমরা অনুমান করতে পারি। তৃতীয় কাহিনি কাল্পনিক। আগুস্তিন কাব্রাল ত্রুখিইয়োর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং অনুগত। আগুস্তিনের কিশোরী কন্যা উরানিয়া নৃশংসভাবে ধর্ষিত হয় ত্রুখিইয়োর হাতে। স্বদেশ ছেড়ে চলে যায় উরানিয়া বা যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভয়াবহ অতীত তাকে তাড়া করে ফেরে। ত্রুখিইয়োর হত্যার প্রায় তিনদশক পরে সে স্বভূমি সান্তো দোমিঙ্গোতে, স্বজনের কাছে ফেরে। তখন মধ্যবয়সি উরানিয়া নিউ ইয়র্কের লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী। সেই সময় অতীতের নিষ্ঠুর স্মৃতিতে ক্ষতবিক্ষত উরানিয়ার নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় অসুস্থ শয্যাশায়ী পিতা আগুস্তিনকে। রাজনীতিমনস্ক, সমাজসচেতন ঔপন্যাসিক ইয়োসা এই তিনটি কাহিনির টানাপড়েনে এক আশ্চর্য উপন্যাস উপহার দিয়েছেন পাঠককে। তাদের কাছে পরতে পরতে উন্মোচিত হয়েছে সুদূর ল্যাটিন আমেরিকার একটি ছোট্ট দেশের স্বৈরতন্ত্রের নৃশংসতা।