যাঁরা আধুনিকতার পাঠ পাননি এখনও

ক্যানসেল কালচার মানে একপ্রকার সামাজিক গণ-আচরণ, যেখানে নিন্দা, বয়কট আর বিদ্বেষের ঢেউয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—নৈতিক বিশুদ্ধতার নামে আমরা কি নিজের সুবিধামতো ইতিহাস বেছে নিচ্ছি?

- সঙ্গী তা ব ন্দ্যোপাধ্যায়

ক্যানসেল কালচার। এই শব্দদ্বয় প্রথম কবে শুনেছিলাম ঠিক মনে পড়ছে না, তবে সম্ভবত ২০১৮ নাগাদ। আমাদের বাংলা সাহিত্যের প্রচণ্ড বিখ্যাত ও প্রবাদপ্রতিম দুই পুরুষ সাহিত্যিকের ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো ব্যক্তিগত আদান-প্রদানকে ঘিরে (উভয়ের উভয়কে লেখা চিঠি যা বই আকারে ছাপা হয়েছে) একটি বহুল প্রচলিত সমাজ মাধ্যমে শুরু হয় এক কঠোর ও তীব্র সমালোচনা। বইয়ের পাতার সেই অংশের ছবি তুলে দিয়ে ধিক্কারে, ধিক্কারে ও নিন্দায়, নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে সমাজের সব ধরনের মানুষ, যাদের পোশাকি নাম নেটিজেন। সাত বছর আগের ঘটনা। মনে রাখতে হবে যে, তখনও সমাজ মাধ্যমে আজকের মতো এতটা উগ্র চরিত্রের সমালোচকরা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তখনও এই নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠা মানুষদের মানুষ বলেই মনে হত। এখন যেমন ‘নিন্দা' বা ‘সমালোচনা এই শব্দগুলোকেই যথেষ্ট ভারী বলে মনে হয় না আর, কারণ এখন এই নিন্দুকরা যেটা করে সেটা আঁচড়ানো-কামড়ানোর সমার্থক। এখন এই আচরণকে বলা হয় ‘বুলি’ করা, বলা হয় ‘ট্রোল' করা। সে এক ভয়ঙ্কর জিনিস! ট্রোল শুনলেই আমার মনে হয় এক ট্রেন ভর্তি উন্মাদ লোক। ট্রেনের মাথায়ও উঠে বসে আছে শত শত লোক। ট্রেন থেকে ঝুলছে লোক। ইঞ্জিনের সামনেও কাতারে কাতারে লোক। আর সবাই মিলে উল্লাস করতে করতে ট্রেনে চেপে একটা মানুষকে চাপা দিতে আসছে। গাড়ি চাপা নয়। একেবারে ট্রেন চাপা। ট্রোল শব্দটার এটাই হল আমার ভিশুয়াল ইন্টারপ্রিটেশন। সেদিনের সেই ধিকৃত পুরুষদ্বয় এই সামাজিক চপেটাঘাতের মুখে সশরীরে, স্বপোস্থিতিতে পড়েননি কারণ দু'জনেই তখন প্রয়াত। বেঁচে থাকলে দু'জনের বয়সই বিরানব্বই-তিরানব্বই হত। তার মানে তাঁরা জন্মেছেন ওই গত শতাব্দর তিরিশের দশকে। গত শতাব্দর তিরিশের দশকে জন্মানো দু'জন মেধাজীবী পুরুষ। দু'জনের সমস্ত লেখালিখির মধ্যে আধুনিকতা আছে। তৎকালীন সময়কে বুড়ো আঙুল দেখানো আছে, সেই সময়ের ভণ্ডামিকে নস্যাৎ করা আছে, যাবতীয় রক্ষণশীলতাকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়ার স্পর্ধা আছে, আছে বামমনস্কতা, আছে সময়োপযোগী রেফর্মেশনের কথা। আছে ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে সম্পূর্ণ বিযুক্তি। আছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আছে জাতপাতের অবদমনের প্রতি বিরুদ্ধতা। অসংখ্য অসংখ্য সঙ্কীর্ণমনস্কতার বিরুদ্ধে আছে বিদ্রোহ। এমন এক আধুনিকতা আছে যা সেই সময়ের প্রজন্মকে আকৃষ্ট করেছে, চালিত করেছে। এখনও করে। বাঙালি মননের সঙ্গে তাদের প্রায় অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। পর পর কয়েক প্রজন্মকে তাঁরা চিরকালের মতো ম