সংস্কারক

মনমোহন খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন, সঙ্কট থেকে মুক্তির জন্য কিছু পদক্ষেপ করতে হবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগে যাবে। রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরাতে, শিল্পনীতিতে আমূল পরিবর্তন, অর্থনীতির উদারীকরণের জন্য যা যা করার, সব করা হবে।

- প্রে মাংশু চৌ ধু রী

টাকার স্তূপের উপরে হাসি মুখে ছুটে বেড়াচ্ছেন উত্তমকুমার। সত্যজিৎ রায়ের নায়ক ছবির অরিন্দম। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা অরিন্দমের শীর্ষে পৌঁছোনোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে। অথচ বড়লোক হওয়ার জন্য ছুটতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে অধোগমনের অপরাধবোধ তাঁকে তাড়া করছে। তাই একটু পরেই উত্তমকুমার দুঃস্বপ্নের মধ্যে টাকার চোরাবালিতে ডুবে যান। ১৯৬৬ সালে নায়ক-এর এই দৃশ্যের ঠিক উল্টো ছবি ১৯৯৬ সালের ইয়েস বস-এ। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শাহরুখ খান বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে মশগুল হয়ে টাকার স্বপে শুয়ে থাকেন। তা বলে নৈতিক অধঃপতনের চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার ভয় তাঁকে তাড়া করে না। অর্থ, ক্ষমতা, পায়ের তলায় গোটা দুনিয়াকে জয় করা তাঁর কাছে নেহাত ছোট্ট স্বপ্ন। মোটেই ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। ১৯৬৬ থেকে ১৯৯৬–এই তিন দশকের মাঝের সময়ে এই পরিবর্তন কী ভাবে সম্ভব হল? বদলে গেল মধ্যবিত্ত মানুষের মানসিকতা। সাধ্য বাড়ল। বড়লোক হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষকে আর নৈতিক অধঃপতনের দুঃস্বপ্ন তাড়া করে না। দুনিয়া এখন তার হাতের মুঠোয়। এটাই মনমোহন সিংহের উত্তরাধিকার। তাঁর হাত ধরেই এই বদল।

মধ্যবিত্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্বপ্ন থেকে সাধ্যের মধ্যে এনে ফেলার তিনিই কান্ডারি। আমজনতার স্বপ্নপূরণ করতে ভারতের আর্থিক সংস্কারের রূপকার। আর্থিক সংস্কার কী? ধরুন, আপনার বাড়িতে ছোটখাটো মেরামতির কাজ চলছে। একবার আপনি বৈঠকখানার জানলা পাল্টাচ্ছেন। আর একবার রান্নাঘরে নতুন করে চুনকাম করাচ্ছেন। এ হল প্রয়োজন অনুযায়ী মেরামতি। আপনি যদি এক সঙ্গে বৈঠকখানা, রান্নাঘর-সহ গোটা বাড়ির নানা রকম রদবদলের কাজ একসঙ্গে করে ফেলেন, তা হলে গোটা বাড়িটার এক সঙ্গে ভোল বদলে যায়। তখন তা বাড়ির সংস্কার হয়ে ওঠে। আর্থিক সংস্কারও আসলে তাই। আর্থিক নীতিতে বারবার ছোটখাটো নানা রকম রদবদল না-করে, এক ধাক্কায় একগুচ্ছ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন। যাতে অর্থনীতির দিশাই বদলে যায়। ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনীতির সেই সংস্কারের কাজটিই করেছিলেন মনমোহন সিংহ। রোজকার জীবনে মনমোহন সিংহের আর্থিক সংস্কারের প্রভাব কতখানি?