হিরণ্ময় থাপ্পড়

বাঙালি পাঠক যদি এই বই দু'টিকে মাথার পাশে রাখতে পারেন, রাখা আছে আমি জানি, তা হলেই কবিতার গর্ভগৃহে পৌঁছোতে পারবেন। এই দু'টি বই হল গর্ভগৃহে পৌঁছোনোর পাসপোর্ট আর ভিসা।

- সুবোধ সরকার

চেহারা ছিল চাবুকের মতো, কবিতা ছিল থাপ্পড়ের মতো। একশো বছর পেরিয়ে গেলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কোচবিহার থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, যেখানে যেখানে বাঙালির জনপদ আছে, সেখানে সেখানে নীরেন্দ্রনাথের কবিতা ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ল-- সে ঢেউ উঁচুতে উঠে বাংলা কবিতার দুর্দিনেও হয়ে রইল বাতিঘর।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা আজ আর-একবার হাতে নিয়ে কোনও পাঠক যদি পাতা উল্টে যান, তবে তিনি বিস্মিত হবেন, ভুরু তুলে জিজ্ঞেস করবেন, একটা বইয়ে এতগুলো বিখ্যাত কবিতা? ‘অমলকান্তি', ‘বাতাসি’, ‘একটাই মোমবাতি, ‘জিম করবেটের চব্বিশ ঘণ্টা’, ‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’, ‘পাগলা ঘণ্টি’, ‘আমার ভিতরে কোনো দল নেই, ‘না রাম না গঙ্গা', ‘হ্যালো দমদম’, ‘জোড়া খুন’, ‘কলকাতার যিশু’, ‘উলঙ্গ রাজা, ‘কলঘরে চিলের কান্না, ‘ঘাটশিলা থেকে গয়েরকাটা”, ‘চতুর্থ সন্তান, ‘একদিন এইসব হবে, তাই'। আমি তাঁর বিখ্যাত ষোলোটি কবিতার নাম এখানে দিলাম। অন্য কোনও পাঠক অন্য কোনও ষোলোটি কবিতা তুলে আনবেন জানি। সেই ষোলোটি কবিতার সমান্তরাল ষোলোটি কবিতা তুলে আনবেন কোনও তৃতীয়

পাঠক। তাকেই তো বলে 'রুচির সমগ্রতা'। যাঁরা রুচির সমগ্রতায় বিশ্বাস করেন না, আমার মনে হয় তাঁরা এক-এক জন সাহিত্যের টেররিস্ট। আমার পাহাড় ভাল লাগে, তোমার সমুদ্র, তোমার অরণ্য। আমাকে একজন অধ্যাপক বলেছিলেন, আমার অ্যালেন গিন্সবার্গের কবিতা ভাল লাগে না, জন অ্যাশবেরি-র কবিতা ভাল লাগে। আমি বললাম, বেশ তো আপনার পাহাড় ভাল লাগে না, স্তব্ধ সমুদ্র ভাল লাগে। তখন সেই অধ্যাপক বলেছিলেন, অ্যালেন এত বেশি বিখ্যাত যে, আমি তাঁকে অপছন্দ করি। এখানেই সমস্যা, কারও কবিতা পড়ার আগেই যদি ঠিক করে নিই উনি বেশি বিখ্যাত ওঁর কবিতা পড়ব না, যিনি আন্ডারগ্রাউন্ড কবি তাঁর কবিতা পড়ব, তা হলে যাকে আপনি সম্মান দিলেন আসলে তাকে অসম্মান করলেন।