তিনি নক্ষত্র হতে জানতেন

জাকির হুসেন, তবলার অতুলনীয় জাদুকর, যাঁর স্পর্শে তবলা খুঁজে পেয়েছিল নতুন ভাষা। তাঁর প্রতিভা ও ক্যারিশমা আজও সঙ্গীতজগতে এক আলোকবর্তিকা।

- পায়েল সেনগুপ্ত

আলোর মতো ছিল তাঁর উপস্থিতি। এক নক্ষত্রের আলো, যার চারপাশে অনেক সুর, লয়, তাল খেলা করে গিয়েছে। তিনি এলেই যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠত চারপাশ। তিনি আসলে কে, একথা বোঝার অনেক আগেই কিন্তু তাঁর পরিচয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল একজন আইকন হিসেবে। একঝাঁক চুল, বাঙ্ময় চোখ আর নির্মল হাসির জাকির হুসেনের সঙ্গে তবলা ব্যাপারটা একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। মানুষ এই ব্যক্তিত্বকে আগে চিনেছিল, নাকি তাঁরই হাতে কথা বলতে থাকা তবলা নামের যন্ত্রটির কারসাজিতে মুগ্ধ হয়েছিল বলা কঠিন। কিন্তু ৭৩ বছর বয়সে তাঁর এই প্রস্থান (সংবাদ হিসেবে কিছুটা আকস্মিকও বটে) যেন একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর মতো আরও অনেক কিছুই অন্ধকার করে দিল। তবলাও যেন হারাল তার জৌলুস। সারা পৃথিবীতেই যে-হাতের স্পর্শে জেগে উঠেছিল তার যৌবনের উদ্দামতা, থেমে গেল শেষ পর্যন্ত কেমন যেন এক অনিশ্চয়তায়। কারণ জাকির হুসেনের আগেও কেউ ছিলেন না, তাঁর মতো, পরেও কেউ হবেন কি? জাকিরের আগেও তবলার গুরুদায়িত্ব বহন করে নিজেদের স্বনামধন্য করে তুলেছিলেন পণ্ডিত শামতাপ্রসাদ, আনোখিলাল মিশ্র এবং কিষেণ মহারাজ। জাকিরের পিতা আল্লারাখা কুরেশিও তখন পণ্ডিত রবিশঙ্করের ছত্রচ্ছায়ায় ক্রমশ আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছেন। ১৯৫১ সালে জাকিরের জন্ম। দেশে খুব বেশিদিন থাকা হয়নি জাকিরের, বাবার সঙ্গে আমেরিকায় চলে গিয়েছেন অনেক ছোট বয়সেই। কিন্তু তবুও জাকিরের নিজের জায়গা যেন মুম্বই-ই থেকে গিয়েছে। বারবার নিজের শিকড়ে ফেরার মতো তিনি ফিরে এসেছেন মুম্বইতে। সারা পৃথিবীতে খুব ছোট বয়স থেকেই পণ্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ আলি আকবর খান, উস্তাদ বিলায়েত খানের মতো শিল্পীদের সঙ্গে একের পর এক কনসার্ট করে নিজেকে সমৃদ্ধ করা ও প্রতিভার পরিচয় দেওয়া জাকির কিন্তু মুম্বইতে নিজের কাজ করার কথা ভোলেননি। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে নানারকম কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মেনস্ট্রিম তবলা পারফরম্যান্সের সঙ্গে-সঙ্গে নিজের সৃজনশীলতাকে অন্য পথে চালনা করেছিলেন তিনি, যেখানে তাল, লয়ের সঙ্গে সুর ও সঙ্গীতবোধেও তৈরি করতে চেয়েছিলেন নিজের পরিচয়। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে প্রথম অ্যালবাম বেরোয়, লিভিং ইন দ্য মেটিরিয়াল ওয়ার্লড। এর পর একের পর এক শিল্পীর সঙ্গে অ্যালবাম বের হয় ত