দেখি ফিরে ফিরে

বামপন্থী ইন্টেলেকচুয়াল, নাক উঁচু প্রগতিশীল মহল থেকে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে যে, বিবর শুধু অশ্লীল নয়, সাহিত্য-সমাজের জন্য অতি ক্ষতিকর। অতএব এই বই বর্জন, এই বই যে-পড়বে তাকেও বর্জন! তবে শুধু বর্জন নয়, অন্যদিকে প্রশংসাও ছিল।

- প্রচেত গুপ্ত

এই লেখা পড়ার সময় কেউ যেন ধরে না নেন, সমরেশ বসুর সাহিত্য বিচার করতে বসেছি। সে কাজ যথার্থ জনরা করেছেন, ভবিষ্যতে আরও হবে নিশ্চয়ই। এটি এই সময়ের একজন সামান্য লেখক হিসেবে সম্মানে, শ্রদ্ধায়, কিছুটা ‘কম্পিত বক্ষ' নিয়ে অগ্রজের দিকে ফিরে তাকানো। এই ‘দেখা” আমারই, দায়ও শুধু আমার।

সমরেশ বসুর সমসময়ে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কোনও লেখককে নিয়ে এত এত প্রশংসা-নিন্দে, এত বিতর্ক, এত রাজনৈতিক বিচার, এত শ্লীল-অশ্লীলতার হিসেব-নিকেশ হয়নি। আজ, তাঁর জন্মের একশো বছরে পরেও (লেখার জন্ম কবে বলা মুশকিল। সাড়া ফেলা গল্প 'আদাব' প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে। জীবনীকাররা বলছেন, তার আগে স্বাধীনতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় 'শের সর্দার')। তিনি বিতর্ক থেকে গা বাঁচাতে পারেননি। আজও তাঁর লেখা নিয়ে কথা উঠলে, কেউ উচ্ছ্বসিত, কেউ ভুরু কোঁচকান। কেউ বলেন, ঠিক ভাবে পৌঁছোতে পারলে মানুষটা বিশ্ব সাহিত্যে উচ্চ আসন পেত। আবার কেউ বলেন, 'কমিউনিস্ট বিরোধিতা” আর ‘অশ্লীলতা’-কে উপাদান করতে দিয়ে তিনি একদা জনপ্রিয় হতে পারেন, কিন্তু খাঁটি সাহিত্য থেকে সরে গিয়েছিলেন। তাই জনপ্রিয়তাতেও পড়েছে ভাটা। এ তো আলোচক আর পাঠকদের ভাবনা, এই সময়ের একজন লেখক (যিনি শুধু বাইরে লেখেন বলে ‘লেখক’ তকমা পাননি, ভেতরে ‘লেখক’ বলেই লেখেন বা লেখার স্বপ্ন দেখেন), ছোটবড় যা-ই হোন না কেন, তিনি কী ভাবে সমরেশ বসুকে দেখবেন? আদৌ কি ফিরে তাকানোর দরকার রয়েছে? একশো বছর আগে জন্ম নেওয়া একজন লেখককে আধুনিক কথাকারের কী প্রয়োজন? বাংলা সাহিত্যে এর মধ্যে কতই না জল গড়িয়েছে। মূল স্রোতের পাশাপাশি আধুনিক সাহিত্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও কম হয়নি। হয়েছে নতুন নতুন শৈলীর উদ্ভাবন, লিটল ম্যাগাজিনের শাস্ত্র বিরোধিতা, গল্প ছাড়াই ‘গল্প’, নানা পত্রিকাকে ঘিরে নিজস্ব ভাবনার সাহিত্য গোষ্ঠী। তা হলে আবার সমরেশ বসু কেন?