মনোজ মিত্র (১৯৩৮-২০২৪)

“আমি তো আর রবীন্দ্রনাথ-শেক্সপিয়রগিরিশচন্দ্র-ব্রেশট-দারিও ফো-কে পাব না, কাছে যদি পেয়েছি মনোজকে, প্রযোজনার স্বার্থে সুবিধেটুকু আদায় করে নেব না কেন?”

- বিভাস চক্রবর্তী

‘বিকেলের হলদে কোমল রোদ্দুর মাতলা ওঝার জীর্ণ কুঁড়েঘরের চালে চিকচিক করছে। উঠোনে ছড়িয়ে আছে লম্বা লম্বা গাছের স্মরণ ছায়া, অল্প অল্প কাঁপছেও। দাওয়ায় শরীর এলিয়ে ঘুমুচ্ছে বাদামি। তার ক্লান্ত কালিপড়া চোখেমুখে কী অসম্ভব হলদে নিষ্প্রাণতা। দূরে কোথাও একটা কাঠঠোকরা গাছের গায়ে একটানা ঠোঁট ঠুকছে। জংলা পাখি, ঘুঘু জাতীয়, মাঝে মাঝে ডাকছে। দাওয়ায় একটা দড়ির দোলনা টাঙানো, তার মধ্যে একটা ছেঁড়া মাদুরের টুকরো। দোলনাটা মৃদু মৃদু দুলছে, ক্যাঁচ শব্দ উঠছে। অদূরের আলপথের ঢালু পাড় বেয়ে একটা লোক নেমে আসছে উঠোনের দিকে। মাতলা বাড়ি ঢুকছে। টানটান পাকানো একগোছা শক্ত দড়ির মতো তার চেহারা–ঢ্যাঙা, খড়ি ওড়া বুকপিঠ, অর্ধনগ্ন। চুপসানো পেট, রুক্ষ ঝাঁকড়া চুল, ভাঙাচোরা মুখ। মাতলার মাথায় একটা মাঝারি আকারের কলসি, মুখটায় সরা বসিয়ে বাঁধা। মাতলার কোমরে একটা জালবোনা থলি, হাতে একটা সড়কি। উঠোনের একধারে যে ভাঙাচোরা বাঁশের মাচাটি রয়েছে, কলসিটা সে তার ওপর রেখে, জাল ও সড়কি দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়। দাওয়ায় উঠে বাদামিকে একচোখ দেখে নিয়ে মাদুরটা খুলে নামিয়ে শূন্য দোলাটা গুটিয়ে চালের বাতায় গুঁজে রাখে। তারপর ঘটিতে জল গড়িয়ে নিয়ে মুখে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে। বাদামি চোখ মেলে, হাই তোলে।”