নজরদারি-খবরদারি-ফাঁসির দাবি পেরিয়ে

যে-মেয়েটি গাড়ি চালান, তাঁর শেষ প্যাসেঞ্জার নামিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত দুটো বাজলে বা যে-মেয়েটি খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন, তাঁকে কি বলা হবে যে, রাতে আপনি কাজ করলে প্রশাসন আপনাকে সুরক্ষা দেবে না?

- শাশ্বতী ঘো ষ

আপনি অসুস্থ, বা হয়তো আপনার বৃদ্ধা মা, না হলে আপনি সদ্য কোনও অস্ত্রোপচার থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাই আপনার দিনরাতের পরিচর্যার কাউকে, বিশেষত কোনও মেয়েকে প্রয়োজন। কিন্তু আপনার রাজ্যে মেয়েদের রাতে কাজ করা ‘যথাসম্ভব' এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিচ্ছে রাজ্যের প্রশাসন। কারণ রাজ্যের, মানে খোদ কলকাতা শহরের একটি নামকরা মেডিক্যাল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসক-ছাত্রী ছত্রিশ ঘণ্টা ডিউটির শেষে বিভাগের সেমিনার রুমে, যেখানে সন্ধে পর্যন্ত ক্লাস চলেছে, বিশ্রাম নিতে গিয়ে হয় নিহত হয়ে ধর্ষিত হলেন বা ধর্ষিত হয়ে নিহত হলেন। কেউ তাঁকে সেই সময়ে সুরক্ষা দিতে পারেনি, তাঁর সহকর্মীরা, বিভাগের ঊর্ধ্বতন অধস্তন অন্যরা, কলেজ কর্তৃপক্ষ – কেউ না। বরং কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যস্ত হয়ে গেল ঘটনাটাকে ধামাচাপা দিতে! মা-বাবাকে দীর্ঘ সময় মেয়ের শরীরের কাছে ঘেঁষতে না-দেওয়া, বেআইনিভাবে, নিয়ম অনুসরণ না-করে ময়না তদন্ত করা থেকে দেহ তড়িঘড়ি দাহ করে দেওয়া, এই সব কিছু কলেজ কর্তৃপক্ষ করেছে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে, যে-পুলিশ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই কর্তব্যরত তরুণী চিকিৎসককে তাঁর কাজের জায়গায় ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাই মেয়েরা ডাক দিলেন রাত দখলের। এই রাত যতটা তোমার, ততটাই আমার। সব বয়সের নারী, বহু পুরুষ এবং অসংখ্য প্রান্তিক লিঙ্গ আর যৌন পরিচয়ের মানুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই রাত দখলের ডাকে পথে নামলেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতে। সেই প্রতিক্রিয়া দেখে বিচলিত রাজ্যের প্রশাসনও। রাজ্যের প্রশাসনের পরামর্শ—মেয়ে চিকিৎসকদের যথাসম্ভব কম রাতে ডিউটি দেওয়া হবে। সেই পদক্ষেপ তো মেয়েরা চাননি। মেয়েরা সুরক্ষা চান নিশ্চয়ই, কিন্তু তা কেন খবরদারি আর ঘরে বন্দি রাখার বিনিময়ে আসবে? তাই স্বাভাবিকভাবেই ফুঁসে উঠেছেন মেয়েরা। প্রতিবাদ অব্যহত। কাজের জায়গায়, পড়ার জায়গায় যেমন মেয়েরা সুরক্ষা চান, তেমনই পথেঘাটে, পার্কে, পুণ্যস্থানে আর পাপস্থানে, সর্বত্রই চাই সুরক্ষা। কিন্তু সুরক্ষা দেওয়ার নাম করে মেয়েদের গতিবিধির উপরে নজরদারি নয়। এই বললে হবে না যে, রাত দশটার মধ্যে ফেরো, ছোট পোশাক পরবে না, পথেঘাটে যেন ছেলেদের সঙ্গে না দেখা যায়, বেলেল্লাপনা ছেড়েই দিলাম, হইহুল্লোড় করতেও যেন না দেখা যায়, এইসব শর্ত মানলে তবেই পাবে সুরক্ষা— সব মেনে লক্ষ্মীমেয়ে পুণ্যবতীদের দলে যে-মেয়েরা নাম লেখাবে না, তাদেরও সমান ভাবেই সুরক্ষা দিতে হবে। আর মেয়েদের