আমার প্রেমজীবন

জীবনে দু'জন পুরুষকেই মন দিয়েছিলেন। একজন উত্তমকুমার, দ্বিতীয়জন সর্বেন্দ্র সিংহ। আনন্দলোক-এর জন্য লেখা আত্মজীবনীতে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় তুলে ধরলেন তাঁর প্রেমজীবনের কথা। এবার তৃতীয় পর্ব

- 

গত সংখ্যা শেষ করেছিলাম সেই মানুষটার কথা বলে, যিনি আমাকে কালীঘাটের মোড়ে পানের দোকান থেকে বাড়ি অবধি অনুসরণ করতেন। তিনিই কিন্তু আমার জীবন বদলে দিয়েছিলেন। উনি না থাকলে আজ ‘সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়'কে কেউ-ই চিনতেন না। সেই অদ্ভুত দেখতে মানুষটার নাম, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ভানুদাকে নিয়ে এই সংখ্যায় নয়, পরের সংখ্যায় বলব। এই সংখ্যায় তাঁকে স্মরণ করব, যিনি আমার জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন। আজ তিনি আমাকে ছেড়ে পরলোকে চলে গেলেও, তাঁর অস্তিত্ব এখনও টের পাই। সর্বেন্দ্র সিংহ। উত্তমদার পর আমার জীবনের দ্বিতীয় পুরুষ। হ্যাঁ, এটা স্বীকার করতে লজ্জা নেই যে, সর্বেন্দ্রকে আমি মানসিকভাবে আমার জীবনসঙ্গীর জায়গায় বসিয়েছিলাম। যদিও উনি বিবাহিত ছিলেন। আমার ভাগ্যে তো আর অবিবাহিত পুরুষের যোগ ছিল না! আগেই বলেছি সর্বেন্দ্র খুব বড় ব্যবসায়ী বাড়ির ছেলে ছিলেন। যদিও ওঁর ব্যবসায় খুব একটা মন ছিল না। বরং অভিনয় করতে খুব ভালবাসতেন। সর্বেন্দ্র ও তাঁর পরিবারকে আমরা অনেকদিন আগে থেকেই চিনতাম। ওঁর মায়ের নামও ছিল সাবিত্রী এবং আমি আর সর্বেন্দ্রর মা একই মন্দিরে পুজো দিতে যেতাম। এছাড়াও আমরা যে বাড়িতে থাকতাম, আমাদের প্রতিবেশী এক ডাক্তারবাবু ছিলেন। তিনি বিপদে-আপদে আমাদের খুব সাহায্যও করতেন। সেই ডাক্তারবাবু সর্বেন্দ্রর খুব কাছের বন্ধু ছিলেন।

সেই সূত্রে উনি প্রায়ই ডাক্তারবাবুর বাড়িতে আসতেন আর আমাদের চোখাচোখি হত। ওই সময়টায় উত্তমদার সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে, তাই আমারও অন্য পুরুষের প্রতি দুর্বলতার পূর্ণ মানসিকতা ছিল। আর সর্বেন্দ্র খুবই সুদর্শন ছিলেন। লম্বা-চওড়া, গায়ের রং ফর্সা, ওঁকে দেখে যে-কোনও মেয়েই মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকবে! সর্বেন্দ্রর শুধু একটাই বদভ্যাস ছিল। প্রচণ্ড মদ্যপান করতেন। আরে মদ তো আমরা সবাই খাই। আমিও খেতাম, উত্তমদাও খেতেন। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ে। সর্বেন্দ্রর সে-সবের বালাই ছিল না, সকালে ঘুম থেকে উঠেও মদ খেতেন, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও মদ খেতেন! এই নিয়ে আমার সঙ্গে খুব ঝগড়াও হত, কিন্তু এই বিষয়ে উনি কারও কথা শুনতেন না।