মনের প্রশান্তি মায়ের কাছে aa

শান্তি অন্তরের সম্পদ। নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়েছেন শ্রীশ্রীমা সারদা। লিখেছেন প্রব্রাজিকা আপ্তকাম প্ৰাণা।

- 

সমাজ বদলে বদলে যায়, কালের নিয়মে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশও পরিবর্তিত হয়ে চলে। কিন্তু জীবনজিজ্ঞাসা চিরন্তন ; পরিবর্তিত পটভূমিতেও জীবনসমস্যা এবং তার সমাধানের আকুতি একই থাকে। মানবমনের অশান্তি এইরকমই একটি সমস্যা যা যুগে যুগে কালে কালে সভ্যতার অন্তরে বাসা বেঁধে আছে। পৃথিবী আধ্যাত্মিক পুরুষশূন্য কখনও হয় না; যুগে যুগে মহামানবরা আবির্ভূত হয়ে সাধারণ মানুষকে বলে দেন মনের অশান্তি দূর করার উপায়। নিজেদের জীবন দিয়ে আচরণ দিয়ে দেখিয়ে যান কেমন করে তাঁরা লাভ করেছেন শান্তি আর আনন্দের পথ। এযুগে শ্রীরামকৃষ্ণদেব, শ্রীমা সারদা দেবী এবং স্বামী বিবেকানন্দ সহ তাঁদের অন্তরঙ্গ পার্ষদবৃন্দ দেখিয়ে গিয়েছেন মানবের চির আকাঙ্ক্ষিত শান্তিলাভের পথ। এই প্রবন্ধে আমরা শ্রীশ্রীমায়ের জীবনের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখব। শান্তি বাইরে থেকে আসে না, শান্তি অন্তরের সম্পদ। জীবনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে নয়, জীবনের সমরাঙ্গনে থেকেই শান্তি অনুভব করতে হবে। তাই আমাদের মনের প্রশান্তি তখনই বজায় থাকবে যখন অন্তর্জীবন ও বহির্জীবন যথাযথভাবে গঠন করে আমরা প্রকৃত মানুষ হব। শ্রীশ্রীমায়ের অনুপম জীবন ও বাণী অনুসারে এই মনের প্রশান্তি বজায় রাখার বিষয়টিকে কয়েকটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে। ‘আমি’ ‘আমি’ ভাবটিই জগতের সমস্ত অশান্তির মূলে। ‘আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল'। মায়ের জীবন এই আমিত্ব বিলোপের এক মহা দৃষ্টান্ত। প্রথম জীবনে শ্রীরামকৃষ্ণের সেবায়, পরবর্তীকালে সাধু ও ভক্তদের সেবায় সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত ছিল তাঁর জীবন। নিজের সুখের বা স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। তাঁর সংসারে তিনিই প্রধান, তবু ভোররাত থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত সদাপ্রসন্ন অন্তরে অক্লান্তভাবে তাঁকে সকলের সেবা করে যেতে দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা অবাক হতেন। কেউ তাঁকে সাহায্য করতে আসছে কি না, নিজের যথাযথ বিশ্রাম হচ্ছে কি না... এসব প্রশ্ন কোনওদিন তরঙ্গ তোলেনি। তাঁর মনে।