স্বাদবদলের পুজো কাছেপিঠের বনেদিবাড়ি

রোদে স্নান করা বাতাসে, নাগরিক অহঙ্কার ছেড়ে নির্মল পুজোর স্বাদ পেতে এবার বরং লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়ুন খানিক দূরের পুজোয়। কোথায় যাবেন? রুট ম্যাপ এঁকেছেন তাপস কাঁড়ার।

আ ....কাশে বাতাসে শারদোৎসবের একটা গন্ধ পুজো এলেই ছড়িয়ে পড়ে। রোদে, মেঘে মনপালাইয়ের হাতছানি। ঘরে কিছুতেই মন বসে না। শুধু পালাই পালাই! তন্নিষ্ঠা পুজোয় একটা দিন কোথাও না কোথাও যায়। প্রতি বছর পুজোয় ওর নাগরিক কোলাহল থেকে নিভৃতযাপনের প্রোগ্রাম করাই থাকে। এবারও নির্মাল্যকে সেটা জানিয়ে রেখেছে। পুজোর কলকাতায় একটা অন্যরকম মেজাজ। সেই মেজাজকে কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নিতে চায় দু’জনে। তাই পুজোর চারদিন কলকাতা ছেড়ে ট্রেন ধরার কথা ওরা ভাবেই না। তবে পুজোর মধ্যে একদিন সকাল থেকে সারাদিন গ্রামের পুজোর মৌতাত নিতে বেরিয়ে পড়ার অভ্যেস সেই ছোট থেকেই। পুজো এলে অনেক স্মৃতি দলা পাকাতে থাকে মাথার মধ্যে। তখন ভৌমিকবাবুর হুজুগে এইসব হতো। তন্নির বাবা সঙ্গ দিতেন ভৌমিকবাবুকে। লুচি, আলুর দম, ছানার কোপ্তা, মিষ্টি সঙ্গে নিয়ে দুটো পরিবার বেরিয়ে পড়ত দূরে কোথাও। পথে কোনও জমিদার বাড়ি পেলে দেখে নিতেন পুজোর ঝলক। এক বছর তো মহিষাদলে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। নদীর ধারে কাশের দোলা আর আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় মন ভাসিয়ে কোনও এক জায়গায় বসে পড়া। শতরঞ্চি বিছিয়ে ভৌমিকগিন্নি সব জোগাড় করার আগেই নির্মাল্য আর তন্নি দৌড় লাগাত ফড়িংয়ের পিছনে। প্রজাপতির মতো লাগত দু’জনকে। দৌড়ে এসে একটা লুচি মুখে নিয়ে আবার দৌড়। কাশের বনের প্রেক্ষাপটে অপু-দুর্গার ছোটাছুটি যেন। বেশ ছিল সেসব দিন। সেদিনের সেই অমৃতসুধায় বড় হয়েছে দু’জনেই। সেই অভ্যেসের শিকড় যে ওদের মধ্যে থাকবে, তাতে আর নতুন কী?

সপ্তমীর ভোর। ঢাকের বাদ্যিতে গমগম করছে চারদিক। একের পর এক কলাবউ স্নানে চলেছে এ পাড়া, ও পাড়া থেকে। ভোর থেকেই পুজোর আবেশে জড়িয়ে আছে তন্নির মন। কলকাতার পুজো এখন বেশ লম্বা। তৃতীয়া, চতুর্থীতে ঢল নামে রাস্তায়। তার পরের দিনগুলির অবস্থা তথৈবচ। এবারে সপ্তমীতেই গ্রামের পুজো দেখার দিন ঠিক হয়েছে।